নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে চুরি হওয়া ২ মাস ৭ দিন বয়সী একটি শিশুকে র্যাব সফলভাবে উদ্ধার করেছে। চুরির ঘটনার সাড়ে ১০ ঘণ্টা পর গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বেচার দোকান এলাকার একটি বাড়ি থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে এক নারীকে আটক করা হয়েছে।
উদ্ধার হওয়া শিশুটির নাম আবদুর রহমান। সে মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের চৌকিদার বাড়ি এলাকার লিটন মিয়া ও জান্নাতুল ফেরদাউসের সন্তান। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে শিশুটিকে চুরি করা হয়। উদ্ধারের পর রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে শিশুটি তার মায়ের সাথে থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। এ ঘটনায় আটক নারীর নাম সামছুন নাহার (৪০)। তিনিও মীর ওয়ারিশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। র্যাবের বরাত দিয়ে জানানো হয়, লালন-পালনের উদ্দেশ্যে ওই নারী শিশুটিকে চুরি করে নিজের ঘরে নিয়ে যান।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিশু চুরির ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ, র্যাব ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) তাৎক্ষণিকভাবে শিশুটিকে উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করে। চুরির ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযান চালানো হয়।
র্যাব-১১, নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার মিঠুন কুমার কুণ্ডু প্রথম আলোকে বলেন, অভিযানের একপর্যায়ে রাতে তারা জানতে পারেন, মীর ওয়ারিশপুর এলাকার একটি বাড়িতে চুরি হওয়া শিশুটি রয়েছে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তথ্যের সত্যতা যাচাই করে শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়। মিঠুন কুমার কুণ্ড আরও জানান, আটক নারী তার একমাত্র সন্তান প্রতিবন্ধী হওয়ায় লালন-পালনের উদ্দেশ্যে শিশুটিকে চুরি করেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
শিশুটিকে ফিরে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার মা জান্নাতুল ফেরদাউস। তিনি বলেন, ‘হারানো মানিক ফিরে পেয়েছি। এর চেয়ে বড় খুশির কিছু নেই। আমার ছেলেকে উদ্ধার করে দেওয়ার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ধন্যবাদ জানাই।’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, গতকাল দুপুরে শিশুটির মা জান্নাতুল ফেরদাউস তার সন্তানকে নিয়ে জ্বরের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে যান। তার সঙ্গে ছিলেন তার মা তাজনেহার বেগম, যিনি চক্ষু চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য হাসপাতালে গিয়েছিলেন। শিশুটির মা ও নানি টিকিট সংগ্রহের জন্য দুটি লাইনে দাঁড়ানোর সময় জরুরি বিভাগের সামনে থাকা এক নারী জান্নাতুলকে সহযোগিতার কথা বলে শিশুটিকে নিজের কোলে নিয়ে বেঞ্চে বসেন। কিছুক্ষণ বসার পর ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যান। তার সঙ্গে আনুমানিক ছয়-সাত বছরের একটি মেয়েশিশুও ছিল।
জান্নাতুল টিকিট সংগ্রহ করে ফিরে এসে দেখেন, ওই নারী এবং তার সন্তান উভয়ই নেই। তার চিৎকার ও আহাজারিতে ঘটনাটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরে আসে। হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অপরিচিত ওই নারী শিশুটিকে নিয়ে হাসপাতালের সীমানা পেরিয়ে ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কের দিকে চলে যান।
বেগমগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মশিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, উদ্ধার করা শিশুটি তার মায়ের সাথে থানা-পুলিশের হেফাজতে রয়েছে। শিশু চুরির ঘটনায় জড়িত নারীকেও আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আটক নারী ও উদ্ধার হওয়া শিশুটিকে শীঘ্রই আদালতে পাঠানো হবে।