জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাসেল হোসাইন সাভারের কলমা থেকে টিউশন শেষে রাতে ক্যাম্পাসে ফেরার সময় ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
শনিবার রাত আটটায় ঢাকা আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন সি এন্ড বি থেকে মীর মোশারফ হোসেন হল গেইট সংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আহত রাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষে অধ্যয়নরত এবং বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলেন আবাসিক শিক্ষার্থী। তার গ্রামের বাড়ি সাতক্ষীরার তালা উপজেলায়।
আহতের বন্ধু সূত্রে জানা যায়, রাত আটটার কিছু আগে কলমা এলাকা থেকে টিউশন শেষ করে ফিরছিলেন রাসেল। পরে সি এন্ড বি ঘেকে গাড়ি না পাওয়ায় হেঁটেই হল গেটের দিকে আসছিলেন তিনি। হল গেইটের সামান্য দূরে থাকা অবস্থায় রাস্তার বিপরীত পাশ থেকে ছিনতাইকারীরা তার পথ রোধ করে দাঁড়ায়। তার সাথে থাকা টিউশনি নয় হাজার টাকা এবং কিছুদিন আগে কেনা মোবাইল ফোনটি ছিনিয়ে নেয়। যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে মারাত্মকভাবে জখম করে পালিয়ে যায়। ১৫ মিনিটের মতো সেখানে অপেক্ষা করে কাউকে না পেয়ে তিনি নিজেই রিক্সায় চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রে আসেন।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসা কেন্দ্রের ডাক্তার রিফাত হাসান জানান, রাসেল কোমরের ডানপাশে গুরুতর আঘাত পেয়েছেন । আমার তত্ত্বাবধানে প্রাথমিক চিকিৎসা ও সেলাই করা হয়। তার কোমরের পেছনে ডান পাশে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত স্থানে তিনটি সেলাই করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো- উপাচার্য (প্রশাসন) সোহেল আহমেদ, প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম, রবীন্দ্রনাথ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ডক্টর মোঃ শফিকুল ইসলাম, নিরাপত্তা কর্মকর্তা জেফরুল ইসলাম চৌধুরী সজল সেখানে উপস্থিত হন।
ভুক্তভোগী রাসেল জানান, টিউশনির টাকা দিয়ে নিজের খরচ চালান তিনি। টিউশনির একসাথে পাওয়া দুই মাসের বেতন নিয়ে আসছিলেন তিনি। তিনি আরো বলেন, ছিনতাইকারী ছিল অল্প বয়সী, সংখ্যায় ছিল তিনজন। তারা প্রথমে এসে গলায় শক্ত করে চুরি ধরে। আমার শ্বাস একেবারে বন্ধ হয়ে আসছিল। সাথে সাথে আমি সব দিয়ে দেই। আমি যাতে আর কাউকে ডেকে আনতে না পারি, সেজন্য যাওয়ার সময় আমার কোমরে একটা কোপ দিয়ে যায় ওরা।
এনাম মেডিকেলের অপারেশন থিয়েটারের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডাক্তার আবু তাহের বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকেই তাকে জীবাণু নাশক এটিএস দিয়ে দেওয়া হয়েছে। ২৪ ঘন্টা আমাদের অবজারভেশনে রাখার জন্য তাকে ভর্তির পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক রাশিদুল আলম বলেন, আমরা খবর পেয়ে দ্রুততম সময়ে সেখানে এসেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার আন্তরিক ছিল। তার অবস্থা এখন অনেকটা স্টেবল। তারপরও আমরা তাকে হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা রাখার পরামর্শ দিয়েছি। আমরা সচেষ্ট আছি বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য ।
এদিকে এ ঘটনার পর মীর মোশারফ হোসেন হল ফটকে নিরাপত্তা জোরদার ও শিক্ষার্থীকে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতের ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল করেছে শিক্ষার্থীরা। রবিবার বেলা সাড়ে এগারোটা ও বিকাল চারটায় যথাক্রমে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীা মিনার এলাকায় একটি মিছিল ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ এবং প্রধান ফটক সংলগ্ন সড়কে বিক্ষোভ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা।
এসময় ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থীর শাকিল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাস সংলগ্ন এলাকায় নিয়মিত ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। শিক্ষার্থীদের সাইকেল চুরি হয়, মুঠো ফোন ছিনতাই হয়। অথচ প্রশাসন দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। গতকাল ক্যাম্পাসের একজন শিক্ষার্থীকে ছুরিকাঘাতের ঘটনা ঘটেছে। ক্যাম্পাস সংলগ্ন গেটে আর কোন ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে এর দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে কি নিতে হবে।