জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) থেকে কল্যাণপুর রুটে বিআরটিসির ডাবল ডেকার বাসে (দুর্জয়) যাতায়াত করা শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। শিক্ষার্থী বহির্ভূত যাত্রী উঠানো, অতিরিক্ত রুটে ভাড়া টানা, পলিটিক্যাল ছাত্রদের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা সহ নানা অভিযোগ উঠেছে এ বাসের চালক সবুজের বিরুদ্ধে। এতে নির্দিষ্ট সময়ে বাসায় ফিরতে না পারা, পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটা সহ টিউশনি বাদ দিতে বাধ্য হচ্ছেন কোন কোন শিক্ষার্থী।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শুধু সবুজ নয়, এর আগের ড্রাইভাররাও এই অনিয়ম করেছিল। নিয়ম অনুযায়ী, বিআরটিসি ডাবল ডেকারের বাসে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থী নিয়ে যাওয়ার পথে বাহিরের কোনো যাত্রী তুলতে পারবে না। তবে নিয়মের তোয়াক্কা না করেই প্রতিদিন বাসের মধ্যে শিক্ষার্থী থাকা সত্ত্বেও বাইরের যাত্রী তুলছে সে। অভিযুক্ত বাস ড্রাইভারের নাম সবুজ।
পরিবহন পুল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় পরিবহন পুলের অধীনে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে চলাচলের জন্য বাস রয়েছে মোট ৫৬টি। এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের জন্য ২৯ টি। যার বিআরটিসি থেকে ভাড়া নেওয়া ১১টি দ্বি-তল বাস। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ১৭ টি এক-তলা এবং ১টি দ্বি-তল বাস।
শিক্ষার্থী ও বাসচালকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন বাসচালক সবুজ কল্যাণপুর যাওয়ার পথে আসাদ গেট থেকে লোক ওঠানো শুরু করেন। আসাদ গেট থেকেই বাসে যুক্ত হয় হেলপার। তিনি একটু পর পরই গাড়ি থামিয়ে মিরপুরগামী যাত্রী বাসে তোলেন। এ কাজে হেলপার পান ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।
কল্যাণপুর পর্যন্ত যাওয়ার কথা থাকলেও নিয়মিত বাস যায় যায় মিরপুর পর্যন্ত। এতে ড্রাইভার বাড়তি আয় করেন ৮শ থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত।
এসব বিষয়ে বাসচালক সবুজ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে খুবই কম বেতন পাই। এই উপরি আয় না করলে ঢাকাতে পরিবারসহ চলা মুশকিল। এ আয়টুকু যদি করতে না পারি, তবে আমাকে রুট পরিবর্তন করতে হবে। আমার আগের ড্রাইভার জাহাঙ্গীর ভাইও এ রুটে টিকতে পারেন নাই।
শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘না, মামাদের (শিক্ষর্থীরা) ভোগান্তি কেন হবে? আমি মামাদের বলেই নিয়েছি।
এদিকে বাসের বেশরভাগ শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের সঙ্গে। তারা বলেন, নিয়মিত আসাদ গেট থেকে লোক ওঠানো হয়। অনেকের বাসায় পৌছাতে দেরি হয়ে যায়। এতে টিউশনি চলে গেছে অনেকের। লোকাল বাসের মতো যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে লোক ওঠানো আর বাসে বসে অপেক্ষা করা অনেক বিরক্তিকর। কিছু পলিটিক্যাল ছাত্রদের জন্য মাঝে মধ্যেই ড্রাইভার ১৫-২০ মিনিট পর্যন্ত রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে।
শরিফুল ইসলাম রাদ নামে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন ‘একটা টিউশনি আছে আমার। মাঝে মধ্যে দেরি হয়ে যায় পৌঁছাতে। বাসের যাতায়াতে আর টিউশনিতেই সময় চলে যায়। পড়াশোনার সময় কম পাওয়া যায়।
তাবাসসুম মিম নামে নৃবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, কল্যাণপুর পর্যন্ত বাস গেলেও তার আগেই অধিকাংশ শিক্ষার্থী নেমে যায়। তখন বাইরের লোক ওঠে। আমি জানতাম সব বাসেই নাকি এভাবে লোক ওঠায়। তাই কাউকে কিছু বলি নাই।
এ বিষয়ে বাসের নিয়মিত ছাত্র আতিক রেজা বলেন, আমি মোহাম্মদপুর পর্যন্ত যাতায়াত করি। মহম্মদপুরের পর থেকে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম থাকে বলে বাড়তি ভাড়া পেতে লোক ওঠানো হয়।
দুর্জয় বাস কমিটির সভাপতি রাকিব বলেন, মোহাম্মদপুরের পর থেকে ড্রাইভার মামা বহিরাগত যাত্রী নেন। তবে এ বিষয়ে তিনি আমাদের অনুমতি নিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের তেমন ক্ষতি হয় বলে মনে হয় না।
পরিবহন পুলের পরিচালক অধ্যাপক ড. সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, দুর্জয় বাসটি ক্যাম্পাস থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত শিক্ষার্থী নিয়ে যাওয়ার সময় শিক্ষার্থী ব্যতীত কোন বহিরাগতদের উঠানোর নিয়ম নেই। যদি এটা করে থাকে তাহলে এটা অন্যায়। আমি এই বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করবো।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. হুমায়ুন কবীর চৌধুরী বলেন, অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীদের বাসে চলাচল করতে হয়। বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে নিয়ম বহির্ভূত কেউ কার্যক্রম করলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।