জয়নাল আবেদীন জয়, জয়পুরহাট জেলা প্রতিনিধি:
এবার কুরবানির হাট কাঁপাতে বাজারে আসছে জয়পুরহাটের রাজা বাবু! তবে এ রাজা কোনো রাজ্যের রাজা নয়। আসন্ন ঈদুল আযহায় কুরবানির পশুর নাম রাখা হয়েছে রাজা বাবু। তবে বড় গরুর চাহিদা কম থাকায় ৩২ মন ওজনের রাজা বাবুর বিক্রি নিয়ে নিয়ে মহা বিপদে পড়েছেন খামারি। প্রথমে বড় গরু পালনে উৎসাহিত হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন প্রান্তিক খামারিরা। প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা বলছেন, বড় গরু পালনে লোকসান ঠেকাতে খামারিদের নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বিল্লা গ্রামের জহুরুল ইসলাম মিলন। নিজ বাড়িতে জন্ম নেয়া ফিজিয়ান জাতের একটি গরু কুরবানি ঈদ উপলক্ষে লালন করছেন প্রায় ৪ বছর ধরে। গরুটির বর্তমান ওজন ৩২ মন ছাড়িয়েছে। গত বছর গরুটি জয়পুরহাটে চাহিদা না থাকায় ঈদের আগে ঢাকার গাবতলি হাটে নিয়ে যান। সেখানেও বিক্রি করতে পারেন নি গরুটি। বাধ্য হয়ে ফেরত আনেন নিজ বাড়িতে। আবারও এক বছর ধরে অধিক যত্নে প্রাকৃতিক খাবার খাইয়ে পরিবারের সকলে মিলে গরুটিকে লালন পালন করছেন। এবারও অনেকে দেখতে আসছেন, ছবি তুলেছেন ও দাম শুনে ফিরে যাচ্ছেন। কেনার আগ্রহ নেই কারও। এমন পরিস্থিতিতে বড় গরু লালন পালন করে বেকায়দায় পড়ছেন মিলন। শুধু মিলনই না গত বছর আক্কেলপুর পৌর শহরের শাহাদৎ হোসেন লেমন ৪০ মন ওজনের একটি গরু মোটা তাজা করে এমনই বিপদে পড়েছিলেন তিনি। এদের মত অনেক খামারি বড় গরু পালন করে লোকসানে পড়েছেন। এসব দেখে অন্য খামারিরাও বড় গরু লালন পালন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।
কুরবানির ঈদে বিশাল আকৃতির ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুগুলো সাধারণ মানুষের নজর পড়লেও ক্রেতাদের নজর কাড়েনি। তাই এক সময় বড় গরু পালনে আগ্রহ থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে মাঝারী গরু লালন পালন করবেন বলে জানালেন প্রান্তিক খামারিরা।
জয়পুরহাট সদর উপজেলার বিল্লা গ্রামের জহুরুল ইসলাম মিলন বলেন, অনেক সখ করে তার নিজ বাড়িতে জন্ম নেয়া একটি ফিজিয়ান জাতের ষাঁড় গরুর বাছুর লালন পালন করছেন চার বছর ধরে। গরুটির সখ করে নাম রেখেছেন রাজা বাবু। গত বছর কুরবানির ঈদে গরুটি নিয়ে ঢাকার গাবতলি হাটে যান বিক্রির জন্য। ক্রেতা গরুটি দেখে শুনে চলে যান। আবার যারা একবার দাম করে আর আসে না। এক সময় কোন ক্রেতাই আর মিলেনি। বাধ্য হয়ে ৫৫ হাজার টাকা খরচ করে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। ফিরে এনে আবারও পরিবারের সকলে মিলে প্রাকৃতিক উপায়ে লালন পালন শুরু করি। এবছর প্রাণি সম্পদ অফিস থেকে এসে লাইভ ওজন করে বলেছেন, ৩২ মন ওজনের বেশি হবে। বাড়িতে প্রতিদিন গরু দেখতে আসছেন লোকজন। কেউ গরুর সঙ্গে ছবি তুলছেন। কেউ দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। এবার আবার ঢাকা নিয়ে যাবো। চাহিদা দাম ১৫ লাখ টাকা। জানি না কি হবে। গরুটির পিছনে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার টাকা খাদ্য লাগে। পরিশ্রম তো আছেই। তবে বড় গরু পালন করার সখ মিটে গেছে। জীবনে আর কোন দিন বড় গরু পালন করবো না। আর কাউকে পরামর্শও দিবনা বড় গরুল পালনের। এই খরচে মাঝারি ধরণের গরু পালন করে বিক্রি করলে লাভ হতো।
জয়পুরহাটের আক্কেলপুর পৌর শহরের টিএন্টিড মোড়ের খামারি শাহাদৎ হোসেন লেমন বলেন, তার খামারে সব মিলিয়ে শতাধিক গরু লালন পালন হতো। গত বছর কুরবানির ঈদ উপলক্ষে তার খামারে ৪০ মন ওজনের একটি ফিজিয়ান ষাঁড় গরু পালন করেছিলেন। গরুটি স্থানীয়ভাবে বিক্রি না হলে কুরবানির ঈদের আগে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে বিক্রি না হলে হতাশা মুখে আবার খামার ফিরিয়ে আনেন। পরে এলাকায় মাইকিং করে জবাই করে কেজি দরে মাংস বিক্রি করেছেন। এতে উৎপাদন খরচের চেয়ে প্রায় তিন লাখ টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। এসব কারণে তিনি এবার তার খামারে গরু লালন পালন বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তার খামারে ছোট বড় মিলিয়ে ১১টি গরু আছে।
খাদ্য, ওষুধ ও শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায়, বেড়েছে উৎপাদন খরচ। প্রতিদিন একটি বড় গরু পালনে আট থেকে নয়’শ টাকা খরচ হলেও সময় মত বিক্রি করতে না পারায় লোকসানে পড়ছেন খামারিরা। তাই সরাসরি বিক্রির পাশাপাশি অনলাইনেও গরু বিক্রির ব্যবস্থা করবে সংশ্লিষ্টরা এমনটাই দাবি প্রান্তিক খামারিদের। এ বছর জেলায় প্রায় ১৫ হাজার খামারে আড়াই লাখেরও বেশি কুরবানির পশু প্রস্তুত রয়েছে। যা জেলার চাহিদা মিটিয়ে অর্ধেকরও বেশি পশু দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যাবে।
জয়পুরহাট প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডা. জিয়াউর রহমান বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে জয়পুরহাটে বিভিন্ন অঞ্চলে প্রস্তুত করা হয়েছে কুরবানির ছোট, মাঝারী ও বড় গরু। খামারিরা শেষ মুহূর্তে পশু গুলোর যত্ন নিচ্ছেন। কেউবা আবার বিক্রির জন্য দাম হাঁকছেন। পশুর আকার ও ওজন দেখে হচ্ছে দামের কম-বেশি। যার গরু সবচেয়ে বড় ও ওজনে বেশি তার গরুর দামও বেশি। সবচেয়ে বড় ও দাম বেশি এ গরু দেখতে প্রতিবার কুরবানিতে থাকে দেশবাসীর আগ্রহ থাকলেও খামারিরা পড়েন লোকসানে। তাই বড় গরু পালনে নিরুৎসাহিত করতে নানা ধরনের পরিকল্পনা হাতে কথা জানালেন।