জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলা করেছে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত অন্তত ষাটজন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে বিশজন সাভারের এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।হামলার সময় রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড আওলাদ হোসেন ও দৈনিক যুগান্তরের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি মোসাদ্দেকুর রহমান ও স্থানীয় একজন সংবাদকর্মীসহ দুইজন আহত হয়েছেন। এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় চিকিৎসা কেন্দ্রের অফিসার ডা. মোহাম্মদ শামসুর রহমান।
সোমবার (১৫ জুলাই) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বক্তব্য প্রত্যাহার ও ক্যাম্পাসে ছাত্র নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচারসহ কোটা সংস্কারের এক দাবিতে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে সাড়ে ৭টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে এনে আন্দোলনকারীদের উপর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল, লাঠি ও দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। এসময় শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।
প্রায় ২০ মিনিট সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মোহাম্মদ আলমগীর কবিরসহ প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা উপস্থিত হলে আন্দোলনকারী ও হামলাকারীরা ছন্নছড়া হয়ে দুইদিকে চলে যায়। এর কিছু সময় পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড় হয়ে আবার আন্দোলনকারীদের উপর হামলা চালায়। এসময় দুই গ্রপের কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের মধ্যে সংঘর্ষ স্তিমিত হলেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় রড, বন্দুক ও লাঠি নিয়ে টহল দিতে দেখা গেছে।
গুরুতর আহতদের মধ্যে রয়েছেন ইতিহাস বিভাগের ৫২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাব্বির হোসেন, প্রাণিবিদ্যা বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মোবাশ্বির, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী
জাহিদ হাসান, ইংরেজি বিভাগের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম বাপ্পি, গণিত বিভাগের ৫০ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী গালিব, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আনজুম, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সজীব পরিসংখ্যান বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমন।
এদিকে ঘটনার পরপরই বিক্ষোভকারীরা উপাচার্য অধ্যাপক ড নূরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়ার প্রায় দুই ঘণ্টা পর উপাচার্য এলে শিক্ষার্থীরা দ্রুততম সময়ে হামলাকারীদেরকে শনাক্ত করে বিচারের দাবি করেন এবং মেদায়োত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদেরকে হল থেকে বিতাড়িত করার দাবি জানান। আগামীকাল দুপুর বারোটার মধ্যে যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়া হলে আবার ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।
সংঘর্ষে আহত বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আব্দুর রশিদ জিতু বলেন, ‘ আমরা সারাদেশে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর হামলার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা নির্মমভাবে আমাদের উপর হামলা করেছে। আমার ভাই ও বোনেরা আহত হয়েছে গুরুতরভাবে। দ্রুত অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে ও আমাদের কোটা সংস্কারের দাবিগুলো মানতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মোহাম্মদ আলমগীর কবির বলেন, ‘ অত্যন্ত অপ্রত্যাশিত একটি ঘটনা ঘটেছে ।আমরা সঠিক তদন্তের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’
রবিউল হাসান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়