জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই গাছ কেটে চারুকলা বিভাগের বর্ধিত অংশের ভবন নির্মাণ প্রকল্পের কার্যাদেশ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই ভবন নির্মাণ প্রকল্পের বাস্তবায়নে প্রায় দুই শতাধিক গাছ নিধন হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
জানা গেছে, ভারত-বাংলাদেশ যৌথ অর্থায়নে প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ নির্মান প্রকল্পের কার্যাদেশ হয়েছে। এখন কেবল অর্থছাড় ও নির্মাণকাজ শুরুর অপেক্ষা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবনের পাশে (আল বেরুনী এক্সটেনশন) চারুকলা বিভাগের নতুন ভবন নির্মাণের জন্য জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে প্রায় দুইশতাধিক গাছ রয়েছে । গাছ কেটে নতুন ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি এবং জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ছে বলে দাবি করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। এছাড়াও পাশে থাকা লেকে বর্জ্য নিরসনের মাধ্যমে উন্মুক্ত জলাশয়টিও ধ্বংস হতে পারে বলে দাবি তাদের।
চারুকলা ভবন নির্মাণের প্রকল্প পরিচালক ও বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম. এম. ময়েজউদ্দীন জানান, ভবন নির্মাণে নির্ধারিত জায়গায় মেহগনি সহ কিছু ডালপালা বিহীন গাছ আছে এবং জায়গাটি বহুদিন ধরে পরিত্যক্ত রয়েছে। এর ফলে কিছু গাছ কাটা পড়লেও পরিবেশের ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন না তিনি । মাস্টারপ্ল্যান না করে ভবন নির্মাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, পূর্বনির্ধারিত এই জায়গাটির পাশের বিল্ডিং এ চারুকলার ক্লাস চলছে অনেক আগে থেকেই এবং আমরা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নকারী কমিটির সাথে কথা বলেছি, তারা আমাকে আশ্বস্ত করেছে, মাস্টারপ্ল্যান এর সাথে সমন্বয় করেই ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এদিকে দিকে জায়গা নির্ধারণ সম্পন্ন হলেও কতটুকু জায়গা নির্ধারণ করা হয়েছে এবং কতগুলো গাছ কাটা পড়বে এ সম্পর্কে কিছুই জানে না বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেস্ট অফিস। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রহমান বলেন, ভবন নির্মাণে কতটুকু জমি নির্ধারণ করা হবে এবং কতগুলো গাছ কাটা পড়বে এ বিষয়ে আমাদের এখনো অফিসিয়ালি কিছু জানানো হয়নি ।
ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদ (একাংশ) সভাপতি অমর্ত্য রায় বলেন, আমরা কখনো চাই না বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ প্রকৃতি ধ্বংস করে ভবন নির্মাণ করা হোক। অপরিকল্পিত নগরায়ণের ফলে ঢাকা শহর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এই অপরিকল্পিত নগরায়ণ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে হলে এখানে পড়াশোনার পরিবেশ থাকবে না। তাই আমরা চাই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের মতামতের ভিত্তিতে মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ভবন নির্মাণ হোক।’ এছাড়াও এইখানে ভবন নির্মাণ করার ফলে প্রায় দুই শতাধিক গাছ কাটা পড়বে যা আমাদের পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড আলমগীর কবীরকে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
এপ্রসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড নূরুল আলমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলে উপাচার্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, উপাচার্য জরুরি আলোচনা সভায় রয়েছেন বলে কথা বলতে পারবেন না।
রবিউল হাসান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়