অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত সার্বজনীন প্রজ্ঞাপনকে ‘বৈষম্যমূলক’ আখ্যা দিয়ে তা প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপারগ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতনস্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) সকাল নয়টা থেকে দুপুর একটা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সবগুলো অনুষদে এ কর্মসূচি পালিত হয়। পরে দুপুর ১২ টা থেকে ১ টা পর্যন্ত সমাজবিজ্ঞান অনুষদ প্রাঙ্গণে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন তারা।
এসময় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ব্যানারে যৌক্তিক দাবি আদায়ের জন্যে আন্দোলন করে আসছি। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে আজকে কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আগামী ২৬ ও ২৭ তারিখ অর্ধদিবস, ৩০ তারিখে আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করবো। তখন শিক্ষকরা প্রশাসনিক কোন দায়িত্ব পালন করবেন না, প্রভোস্ট হলে যাবেন না, চেয়ারম্যান বিভাগে যাবেন না, ইনস্টিটিউটের পরিচালকরা ইনস্টিটিউটে যাবেন না। এটা শুধু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নয়, সারা বাংলাদেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ এ কর্মসূচি পালন করবেন।
গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক আব্দুর রব বলেন, শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। স্বাধীনতার পর বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দেয়ার মূল স্পিরিট ছিল শিক্ষকদেরকে আর্থিক ও প্রশাসনিকসহ সকল কার্যক্রমে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া। সেখানে জারিকৃত এই নতুন প্রজ্ঞাপনে শিক্ষকদেরকে বেতনাদি নিয়েই সংশয়ের মুখে পড়তে হচ্ছে। আশা করি সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন। দেশের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হোক তা আমরা চাইনা।
ভূগোল ও পরিবেশের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষকরা প্রতিটি ক্ষেত্রে বিড়ম্বনার শিকার হয়েছে। প্রথমে ৭৮ হাজার টাকার গ্রেড নিয়ে টালবাহানা হয়েছে। প্রফেসরদের তিনটা ক্যাটাগরি করেছে। এখন সার্বজনীন পেনশন থেকে এটা ইন্সুরেন্সের মতো। কারণ সরকারের সামর্থ্য নেই- এটা একটা ভাওতাবাজি। দুইদিন পর রাষ্ট্রীয় কাঠামোতে অর্থ না থাকলে আপনাকে বেতনের জন্য আন্দোলন করতে হবে। ইউজিসি নির্ধারিত সময়ে আমাদের বেতনের টাকাও দিবে না। সরকারি কলেজে শিক্ষকদের পাসপোর্টটাও সরকারি। সরকারি কর্মকর্তারা গাড়ি পরিচালনার জন্য ৫০ হাজার পায়। পলিসি মেকাররা শিক্ষকদের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। এর প্রতিবাদে দল-মত নির্বিশেষে আমাদের রাজপথে থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, পেনশন স্কিম বাতিলের দাবি জানিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি, কর্মবিরতি ও সমাবেশ করে আসছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। পূর্বঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে ২৫, ২৬ ও ২৭ জুন অর্ধদিবস কর্মবিরতি পালন করা হবে। ৩০ জুন পূর্ণ কর্মদিবস পালন করা হবে। তবে এ সময় পরীক্ষা ও পরীক্ষাসংক্রান্ত কাজ কর্মবিরতির আওতামুক্ত থাকবে। পাশাপাশি সে সময় ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত সব বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান কর্মসূচি থাকবে। তবে দাবি পূরণ না হলে আগামী ১ জুলাই থেকে সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা।