জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে প্রথম ধাপে ছয়টি স্থাপনার নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে আগেই। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের আওতায় ১৩টি স্থাপনার নির্মাণকাজও শেষের পথে এবং তৃতীয় ধাপের আওয়াত তিনটি স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। যদিও একটি স্থাপনা এখনও প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। তবে শেষ সময়ে একটি মহল উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাঁয়তারা করছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে এক হাজার আসন বিশিষ্ট ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য তিনটি করে মোট ছয়টি ১০ তলা হলের নির্মাণকাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এরমধ্যে চারটি হলে শিক্ষার্থীরা থাকছেন এবং বাকি দু’টিতে শিক্ষার্থী ওঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের আওতায় শহীদ রফিক-জব্বার হলের উত্তর ব্লকের ৪র্থ ও ৫ম তলা নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। সেখানেও হলের শিক্ষার্থীরা থাকা শুরু করেছেন।
এদিকে ৬ তলা লাইব্রেরি ভবন, ১০ তলা গেস্ট হাউজ কাম পোস্ট গ্রাজুয়েট গবেষক হাউজ, ৬ তলা লেকচার থিয়েটার, ৩ তলা স্পোর্টস কমপ্লেক্স, ছাত্রীদের খেলার মাঠ, আল-বেরুনী হলের খেলার মাঠ, হাউজ টিউটরদের ১০ তলা বাসভবন, ১০ তলা বিশিষ্ট একটি প্রভোস্ট কমপ্লেক্স, শিক্ষক ও অফিসারদের জন্য ১টি করে ১১ তলা আবাসিক টাওয়ার, তৃতীয় শ্রেণী, চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী ও পরিচ্ছন্ন কর্মীদের জন্য ১টি করে ১১ তলা আবাসিক টাওয়ার এবং সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ কাজ শেষের পথে।
অন্যদিকে উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে তৃতীয় ধাপের আওতায় জীববিজ্ঞান অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন, কলা ও মানবিকী অনুষদ ভবনের সম্প্রসারিত ভবন এবং গাণিতিক ও পদার্থ বিষয়ক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনের কাজ প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় সুত্রে জানা যায়, চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের সব স্থাপনার কাজ শেষ হলে বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যমান সকল সংকট নিরসন হবে। শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুম ও আবাসিক সংকট এবং শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক সংকট দূর হবে। পাশাপাশি বিশ্বমানের সুযোগ-সুবিধা পাবেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা। তবে শেষ সময়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প সংক্রান্ত ১১ পৃষ্ঠার নথিপত্র সম্বলিত একটি ‘উড়োচিঠি’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন দফতরে পাঠানো হয়েছে। সেখানে প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিনকে বিতর্কিত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন তথ্য প্রদান করা হয় এবং প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে ঢালাওভাবে নানা অভিযোগ তোলা হয়েছে। এমনকি উন্নয়ন প্রকল্পের নানা বিষয় দেখভালের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অফিসের থাকলেও তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ করা হয়েছে ওই নথিপত্রে।
তবে প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ দফতর থেকে এসব মিথ্যা তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। তাদের উদ্দেশ্য চলমান উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করা। উড়োচিঠিতে তারা যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন, সেগুলো ভিত্তিহীন। এছাড়া প্রকল্প পরিচালকের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তোলা হয়েছে, তারও কোনো সত্যতা নেই।
এ বিষয়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘শেষ সময়ে একটি মহল উন্নয়ন প্রকল্পকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তবে সবগুলো স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়ম-কানুন অনুসরণ করেই করা হয়েছে। এছাড়া শিক্ষকদের নিয়ে আলাদা তদারকি কমিটি করা হয়, যারা স্ব স্ব স্থাপনার নির্মাণ কাজ তদারকি করেছেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘ব্যক্তিগত ক্ষোভের জায়গা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অফিস উন্নয়ন প্রকল্পকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তাই আমাকে এবং উন্নয়ন প্রকল্পকে জড়িয়ে একটি উড়োচিঠি বিভিন্ন দফতরে পাঠিয়েছেন। তবে তিনি সেখানে যেসব তথ্য উল্লেখ করেছেন, তা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। সেসবের কোনো সত্যতা নেই।’
এর আগে, ২০১৮ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৩টি অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের প্রকল্প নেওয়া হয়।
রবিউল হাসান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়