চলতি মাসের ২০ তারিখ দ্বিতীয়বারের মতো হোয়াইট হাউজে অভিষেক ঘটেছে রিপাবলিকান নেতা ডোনাল্ড ট্রাম্পের। দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে তাঁর এই প্রত্যাবর্তন জন্ম দিয়েছে বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন গতিপ্রবাহের। ট্রাম্প এমন সময় ক্ষমতা গ্রহণ করলেন, যখন বিশ্বের কয়েকটি অঞ্চলে ঘটে গেছে ক্ষমতার পালাবদল। বাংলাদেশও তার মধ্যে একটি।
ছাত্রজনতার গণ-অভ্যুত্থানের পর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যেই অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনয়নে কাজ শুরু করেছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক সম্পর্কে নতুন দিগন্তের উন্মোচন হতে পারে বলে মনে করছেন ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ এশিয়া কিংবা ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনা আগ্রাসন রুখতে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন হতে পারে একটি কার্যকর পদক্ষেপ।
বৈশ্বিক নীতিতে ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” মন্ত্র দেশটির বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও কূটনীতিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রভাব ফেলবে। তবুও ট্রাম্পের অভিষেকের আগেই অন্তবর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা জানানো এবং ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিতব্য ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’-এ বিএনপির ভাইস প্রেসিডেন্ট তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আমন্ত্রণের বিষয়টি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের অগ্রগতির একটা ধাপ হিসেবেই চিহ্নিত করা যায়।
এ ছাড়া, বরাবরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর উপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন ট্রাম্প। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খা এরই মধ্যে দেশটির রপ্তানির বড় অংশীদারে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ট্রাম্পের শুল্ক নীতি কঠোর হলে এ খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে কট্টর চীনবিরোধী ট্রাম্প তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রের বৃহৎ বিনিয়োগের সুবিধাভোগী এই দেশের বিষয়ে অতটা কড়াকড়ি আরোপ করবেন কি-না তা সময়ই বলে দেবে।
এই পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন বিনিয়োগ আকর্ষণ এবং দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা হতে পারে। অন্তর্বর্তী সরকার ইতিমধ্যে রপ্তানিখাতের বহুমুখীকরণ ও দেশীয় শিল্প উন্নয়নে জোর দিচ্ছে, যা ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সহায়ক হতে পারে।
বাংলাদেশের জন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো রোহিঙ্গা সংকট। ট্রাম্প প্রশাসনের মানবাধিকার ইস্যুতে আগ্রহ সীমিত হলেও কৌশলগত কারণে তারা বাংলাদেশকে সহায়তা করতে পারে।
ট্রাম্পের অভিবাসন নীতিও বরাবরই কঠোর। মার্কিন রক্তের ‘বিশুদ্ধতা’ নিশ্চিতকরণে ইতিমধ্যে ১৮ হাজার অবৈধ ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠাতে কাজ করছে তাঁর প্রশাসন। জন্মসূত্রে নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়টিও বাতিলের পক্ষপাতী তিনি। এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশি অভিবাসীদের চ্যালেঞ্জ বাড়িয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত।
সামগ্রিকভাবে, দ্বিতীয় মেয়াদে ট্রাম্প প্রশাসন এবং বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সম্ভাবনাময় সম্পর্ক তৈরির ইঙ্গিত দিচ্ছে। তবে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের ইস্যুতে ট্রাম্পের অবস্থানের স্পষ্টতাই এ ক্ষেত্রে নিয়ামক শক্তি হিসেবে বিরাজ করবে বলে মত বিশ্লেষকদের।