মো নাঈমুর রহমান নাঈম: যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটেছে। রিপাবলিকান ডোনাল্ড ট্রাম্প ২০২৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন, যা তাকে ২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসে ফেরাবে। এটি তার জন্য এক অসাধারণ প্রত্যাবর্তন—একজন “ফিনিক্সের মতো ছাই থেকে পুনরুত্থান,” যেমনটি ফক্স নিউজের একজন উপস্থাপক বর্ণনা করেছেন। অপরাধমূলক দণ্ড, বিভিন্ন অভিযোগ, কথিত হত্যার চেষ্টা এবং স্বৈরতান্ত্রিক আচরণের অভিযোগ সত্ত্বেও তিনি আবার নির্বাচিত হয়েছেন। এভাবে, তিনি চার বছর আগে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কাছে তার পরাজয়ের প্রতিশোধ নিলেন।
নির্বাচনের আগে ট্রাম্প বাংলাদেশের হিন্দু, খ্রিস্টান এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে “বর্বর সহিংসতার” বিষয়ে মন্তব্য করেন—যা অনেকের মতে একপেশে এবং ভিত্তিহীন। এটি উদ্বেগের বিষয় যে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বাংলাদেশকে ভারতের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারে। তবে এই উদ্বেগগুলোর সমাধান হবে বলে আশা করা যায়।
ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” নীতির প্রতিফলন তার নতুন প্রশাসনের কূটনৈতিক পদক্ষেপগুলোতে দেখা যেতে পারে, যা বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক অংশীদার। তবে ট্রাম্পের পূর্ববর্তী আমলের শুল্ক বৃদ্ধির প্রবণতা এবং রক্ষণশীল নীতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি নির্ভরতা বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তার জলবায়ু নীতিও একটি উদ্বেগের বিষয়। ট্রাম্পের আগে প্যারিস চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার এবং বৈশ্বিক জলবায়ু উদ্যোগে কম সম্পৃক্ততা বাংলাদেশের মতো জলবায়ু ঝুঁকিতে থাকা দেশের জন্য চিন্তার কারণ ছিল।
বাংলাদেশের জন্য ট্রাম্পের নীতিতে অর্থনৈতিক স্বার্থ, চীনের প্রভাব হ্রাস এবং দক্ষিণ এশিয়া-কেন্দ্রিক অংশীদারত্ব পুনর্গঠন প্রাধান্য পাবে। ভারতের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে, যা বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী অর্থনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। চীনের বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের পোশাক খাত নির্ভরশীল চীনের কাচামালের উপর।
ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো বাংলাদেশের ওপর চাপ দেবে, যাতে বাংলাদেশ চীনকে এড়িয়ে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়ায়। এছাড়া, বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হতে পারে চীনের ৫জি অবকাঠামো পরিহার করতে। নিরাপত্তা ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে কোয়াড (QUAD) জোটে যোগ দিতে উৎসাহিত করতে পারে। যদি বাংলাদেশ কোয়াডে যোগ দেয়, তবে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বঙ্গোপসাগরে চীনের প্রভাব হ্রাসে ভূমিকা রাখা সহজ হবে।
রোহিঙ্গা সংকটে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছিল এবং USAID-এর মাধ্যমে সহায়তা প্রদান করেছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসন সম্ভবত রোহিঙ্গা ইস্যুতে তেমন সহায়তা করবে না। বর্তমানে মিয়ানমারের পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে, যা সীমান্ত স্থিতিশীলতার ইস্যুতে ঢাকার জন্য ওয়াশিংটনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সহায়ক হতে পারে। তবে বাংলাদেশকে যুক্তরাষ্ট্রের শর্ত অনুযায়ী এগোতে হতে পারে।
বর্তমানে বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনুস ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের জনগণ আশা করে, সরকার যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে যাতে জাতীয় স্বার্থ রক্ষা করা যায়।
লেখক: শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।