সম্প্রতি সারাবিশ্বে বহুল আলোচিত রাজনৈতিক ডিসকোর্সগুলোর মধ্যে অন্যতম “ডিপ স্টেট” শব্দটি। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে রাজনৈতিক নেতা সকলে বুলি আওড়াচ্ছেন শব্দটির। তবে অধিকাংশের অজানা এই কনসেপ্ট সম্পর্কে।
চলুন আজ ডিপ স্টেট সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক :
“ডিপ স্টেট” এর বাংলা ছায়া রাষ্ট্র বা গুপ্ত রাষ্ট্র। একটি রাষ্ট্রের মধ্যে আরেকটি সমান্তরাল রাষ্ট্রকে আধুনিক রাজনৈতিক ভাষা অনুযায়ী ডিপ স্টেট নামে অভিহিত করা হয়। এই ধরনের রাষ্ট্রে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের অন্তরালে একগুচ্ছ রাজনৈতিক ও প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি সক্রিয় থাকে। যারা মূলত নির্বাচিত প্রতিনিধিদের আদেশ কানে শুনলেও সেটি বাস্তবায়ন করেন না। বিপরীতে তারাই মূলত নির্বাচিত প্রার্থীদের পরিচালনা করেন গুপ্তভাবে। তাই তাদেরকে অদৃশ্য সরকারও বলা যায়।
আরও সহজ ভাবে বললে ডিপ স্টেট অর্থ, সরকারের পেছনে আরও একটি সরকার। ডিপ স্টেট পরিচালনা করেন মূলত একটি রাষ্ট্রের আমলা, ব্যবসায়ী, প্রশাসন, এমনকি সামরিক বাহিনী। বিশেষ ভূমিকা রাখেন রাষ্ট্রের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
ডিপ স্টেট ব্যবহার শুরু হয় প্রথম কোথায়?
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২৩ সালে এই স্টেটের সঙ্গে প্রথম বিশ্বকে পরিচিত করায় তুরস্ক। এরপর ১৯৯৭ সালে নিজেদের স্বার্থে সরকারি নথিতে ডিপ স্টেট যুক্ত করেন কাকতালীয় ভাবে সেই তুরস্কই। ধীরে ধীরে বিভিন্ন রাষ্ট্রেও শুরু হয় গুপ্ত এই সরকারের কর্মকাণ্ড। রাজনৈতিক নেতাদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে এই ধরনের গুপ্ত কার্যক্রমে বিশ্বের ক্ষমতাধর অনেক শাসকের পতন ঘটছে।
সবশেষ ২০১৬ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নতুন নীতিমালা নবায়ন করার লক্ষ্যে ডিপ স্টেট নিয়ে আসেন রিপাবলিকান সমর্থিত স্টিফ বেনন যিনি বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মস্তিষ্ক হিসেবেও পরিচিত। ২০২৪ সালের সবশেষ নির্বাচনী ভাষণেও ডিপ স্টেটের কড়া সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এই জন্য আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা সি-আই-এ এবং এফ-বি-আই’কেও সতর্ক থাকতে কঠোর নির্দেশ দেন ট্রাম্প।
ডিপ স্টেট কাজ করে কি ভাবে?
ছায়া সরকার বা গুপ্ত সরকার এক ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব ধারণার উপর ভিত্তি করে গঠিত হয় যার মাধ্যমে বুঝা যায় রাষ্ট্রের প্রকৃত ক্ষমতা নির্বাচিত সরকার নয় বরং অদৃশ্য এই সরকার দ্বারা পরিচালিত হয়।
ডিপ স্টেট একটি রাষ্ট্রের বৈদেশিক নীতি, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, আর্থিক খ্যাত সহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে হস্তক্ষেপ করে। ক্ষমতায় দৃশ্যমান সরকারকে পররাষ্ট্রনীতি এবং দেশের মধ্যে রাজনৈতিক বিষয়গুলো নিয়ন্ত্রণে করতে সরাসরি বাধ্য করে গুপ্ত এই সরকার। এদের জনগণের ম্যান্ডেট না থাকলেও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এরা যে কোন ধরনের কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।
ডিপ স্টেট ভালো নাকি খারাপ?
জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে ডিপ স্টেট সাধারণ জনগণের অধিকার টুকু কেড়ে নেয় এবং রাষ্ট্রের মধ্যে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। নিরাপত্তার কথা বলে তারা রাষ্ট্রকে অভ্যন্তরীণ নানা সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয় এবং আর্থিক সুবিধা লুটে নেয়।
ডিপ স্টেট সম্পর্কে মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট থিওডর রুজভেল্ট বলেছিলেন, প্রকাশ্যে সরকারের পেছনে সিংহাসনে অসীন থাকেন অদৃশ্যে সরকার। দেশের জনগণের প্রতি কোনো দায়িত্ব কিংবা আনুগত্য তাদের থাকে না।
আরইউএস