সম্প্রতি আফগান তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আগ্রহ দেখাচ্ছে ভারত।
গত বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুবাইয়ে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি ও আফগানিস্তানের ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমির খান মুত্তাকির বৈঠককে এই অভিপ্রায়ের গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। এটিকে তালেবান সরকারের সঙ্গে ভারতের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রথম সরাসরি যোগাযোগ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
ভারত-আফগান সম্পর্কের অতীত ভূমিকা
গত ২০ বছরে ভারত আফগানিস্তানে উন্নয়ন প্রকল্প ও মানবিক সহায়তায় ৩০০ কোটি ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। বৈঠকের পর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আঞ্চলিক উন্নয়ন, বাণিজ্য, স্বাস্থ্য এবং শরণার্থী খাতে সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে আলোচনার আড়ালে ভূরাজনৈতিক কৌশলগত উদ্দেশ্যের বিষয়টি বিশ্লেষকদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে।
পাকিস্তান-তালেবান সম্পর্ক এবং ভারতের ভূমিকা
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক বিমান হামলার ঘটনায় তালেবানের ক্ষোভকে ভারতের জন্য সুযোগ হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকরা। তালেবান এখন দেখাতে চায়, তাদের জন্য বিকল্প মিত্রদেশ রয়েছে। এর অংশ হিসেবে তালেবান মুম্বাইয়ে একজন প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়েছে।
এর আগে রাশিয়া, চীন, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশ তাদের দূতাবাসে তালেবানের প্রতিনিধি কার্যক্রম পরিচালনার অনুমতি দিয়েছে।
ভারত কেন তালেবানের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে?
বিশ্লেষকরা বলছেন, আঞ্চলিক প্রভাব ও ভূরাজনীতিতে ভারসাম্য আনতে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়ন ভারতের জন্য অপরিহার্য। ভারতের গবেষক কবির তানিজা বলেন, তালেবান ভারতের জন্য একটি বাস্তবতা। তাদের এড়িয়ে যাওয়ার কৌশল কার্যকর নয়। ভারতের ভিসা সুবিধা পুনরায় চালু করাও সম্পর্ক উন্নয়নে ইতিবাচক পদক্ষেপ হতে পারে।
সীমাবদ্ধতা ও চ্যালেঞ্জ
তবে তালেবান সরকারের প্রতি অতিরিক্ত ঝুঁকে পড়া ভারতের জন্য নীতিগত জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে। নারীদের শিক্ষার প্রতি তালেবানের কঠোর অবস্থান নিয়ে ভারতের নীরবতাকে সমালোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। ভারত এতদিন আফগানিস্তানে নির্দিষ্ট কিছু গোষ্ঠীর ওপর নির্ভর করায় ভূরাজনৈতিকভাবে একপেশে হয়ে পড়েছিল। এই অবস্থান সংশোধন করতে ভারতের সময় লাগতে পারে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
ভারত তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষার ক্ষেত্রে নতুন কৌশল গ্রহণ করলেও বিষয়টি এখনো ভূরাজনীতির একটি জটিল অধ্যায় হিসেবে রয়ে গেছে।
আরইউএস//বিএন