মহাপরিকল্পনার বাইরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) সাড়ে ৬০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে তৈরী করা ১৪টি রেস্তোরাঁ ও দোকান দুই বছরের বেশি সময় ধরে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে । স্থাপনাগুলো বরাদ্দ দেওয়ার প্রক্রিয়া নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি প্রধান প্রকৌশলীর।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পাশে চারটি, টুকিটাকি চত্বরে দুইটি, ডিনস কমপ্লেক্স ভবনের পিছনে একটি ও চারুকলা অনুষদ-সংলগ্ন এলাকায় একটি রেস্তোরাঁ এবং ইবলিশ চত্বরে পাঁচটি ও চারুকলা অনুষদ সংলগ্ন এলাকায় একটি দোকানসহ মোট ১৪টি স্থাপনা নির্মাণ করে প্রশাসন। স্থাপনাগুলোর ওয়াল ইটের হলেও ছাঁদ টিনের।
স্থাপনাগুলোর নির্মাণকাজ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে শেষ হলেও কবে নাগাদ চালু হতে পারে, সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আবার প্রক্রিয়া নির্ধারণ হলেও এগুলো কাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে, সেটাও সুনির্দিষ্টভাবে নির্ধারণ করা হয়নি এখনো। তবে স্থাপনাগুলো শীঘ্রই চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানান কোষাধ্যক্ষ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এর তিন বছর পর ২০২২ সালের শেষের দিকে ক্যাম্পাসের পাঁচটি পয়েন্টে ১৪টি দোকান ও রেস্তোরাঁ নির্মাণ শুরু করে প্রশাসন। প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ টাকা।
এরমধ্যে ইবলিশ চত্বরে ৫টি এবং চারুকলা অনুষদ এলাকায় একটি দোকান নির্মাণে ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭১৭ টাকা, ডিনস্ কমপ্লেক্সের উত্তর পাশে একটি রেস্তোরাঁ নির্মাণে ৮ লাখ ৪০ হাজার ১৯২ টাকা, টুকিটাকি চত্বরে দুইটি রেস্তোরাঁ নির্মাণে ১১লাখ ৬৭ হাজার ৩৯২ টাকা এবং কুদরত-ই-খোদা একাডেমিক ভবন সংলগ্ন চারটি ও চারুকলায় একটি রেস্তোরাঁ নির্মাণে ২৯ লাখ ১৮ হাজার ৪৮০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল।
প্রথমে ১৬টি হোটেল ও দোকান নির্মাণ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ১৫টায় আনা হয়। এরমধ্যে সাতটি দোকান নির্মাণ করার পরিকল্পনা থাকলেও পরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ছয়টি নির্মাণ করা হয়। এই হিসেবে সাতটি দোকান নির্মাণের জন্য বরাদ্দকৃত ১৩ লাখ ২০ হাজার ৭১৭ টাকার মধ্যে একটি দোকানের জন্য বরাদ্দকৃত আনুমানিক ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৭৩ টাকা অবশিষ্ট রয়েছে। অর্থাৎ, বরাদ্দকৃত ৬২ লাখ ৪৬ হাজার ৭৮১ টাকার মধ্যে ৬০ লাখ ৫৮ হাজার ১০৮ টাকা খরচ হয়েছে।
মহাপরিকল্পনাতে না থাকলেও স্থাপনাগুলো তৈরী করার কারণ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী (ভারপ্রাপ্ত) ও এস্টেট দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, যে দোকান ও হোটেলগুলো হয়েছে, সেগুলো অস্থায়ী। শিক্ষার্থীদের সুস্বাস্থ্য ও ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুন্দর করতে অস্থায়ীভাবে দোকানগুলো নির্মাণ করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। ধীরে ধীরে তা বাস্তবায়ন করা হবে।
স্থাপনাগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকার কারণ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য আগের প্রশাসনের সময়েও অনেকবার মিটিং করা হয়েছে। কিন্তু প্রক্রিয়া নির্ধারণ করতেই অনেক সময় লেগেছে। সর্বশেষ সিদ্ধান্ত হলো, এগুলো উন্মুক্ত টেন্ডারের মাধ্যমে সর্বোচ্চ জামানত ও ভাড়া দাতাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে। কারণ, টেন্ডারে না গেলে এটার বৈধতা নিয়ে যেকেউ প্রশ্ন তুলতে পারবে।
অন্যদিকে দোকান ও রেস্তোরাঁগুলো কাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে এবং কোন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়া হবে, এ নিয়ে ক্যাম্পাসের ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের মধ্যে চলছে নানা আলোচনা। তাদের অনেকের দাবি, টেন্ডার পদ্ধতিতে দরিদ্র ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হবেন। এজন্য ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসা ব্যবসায়ীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হোক।
দেড় মাস আগে এ ব্যাপারে এস্টেট দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির একটি সভা হয়। সভায় প্রক্রিয়া হিসেবে টেন্ডার-কে বেছে নিলেও কাদের টেন্ডারে অংশগ্রহণ করার সুযোগ দেওয়া হবে, সেবিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি প্রশাসন।
এস্টেট দপ্তরের উপদেষ্টা কমিটির সভাপতি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, কাদের বরাদ্দ দেওয়া হবে, এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এবিষয়ে আলাদা একটা কমিটি কাজ করছে। এস্টেট দপ্তরের কর্মকর্তারা এবিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারবেন। তবে, আমরা দোকানগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখতে চাই না। শীঘ্রই বরাদ্দ দেওয়া হবে।
এস্টেট দপ্তরের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. রজব আলী বলেন, গত ১০ মার্চ আমাদের একটা সভা হয়েছে। দোকানগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরাদ্দ দেওয়ার জন্য টেন্ডার আহ্বান করা হবে। এখানে আবার দুইটা বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। একটা হলো শুধু ক্যাম্পাসের দোকানদাররা টেন্ডারে অংশগ্রহণ করতে পারবে। আরেকটা হলো, বাইরের মানুষজনও অংশগ্রহণ করতে পারবে। এখন এই দুইটার মধ্যে কোন পদ্ধতিটা চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হবে, সেটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্ধারণ করবে।
স্থাপনাগুলো অনেক আগেই চালু হওয়া উচিত ছিল বলে মনে করেন উপ–উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন। তিনি বলেন, এগুলো আমাদের আগের প্রশাসন তৈরী করেছে। এরপর দীর্ঘদিন এগুলো প্রকৌশল দপ্তরের অধীনে ছিল। আমরা দায়িত্বে আসার পরে স্থাপনাগুলো এস্টেট দপ্তরের কাছে হস্তান্তর করেছি। এস্টেট দপ্তরের সর্বেশেষ সভায় স্থাপনাগুলো টেন্ডারের মাধ্যমে বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
টেন্ডারের মাধ্যমে স্থাপনাগুলো বরাদ্দ দিলে দরিদ্র ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্যাম্পাসে যারা আগে থেকে ব্যবসা করে, তাদেরকে কিছুটা সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা টেন্ডার প্রক্রিয়ায় রাখা হবে।
উপ-উপাচার্য আরও বলেন, দোকানগুলোর মধ্যে একটা দোকান ফার্মেসি বা, ঔষধের দোকানের জন্য নির্দিষ্ট থাকবে। টুকিটাকির দুইটা রেস্তোরাঁ ছাত্রদের জন্য এবং ডিনস্ কমপ্লেক্সের পিছনের রেস্তোরাঁটা শিক্ষকদের জন্য ক্যান্টিন হিসেবে কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার অধীনে পরিচালনা করা হবে। উপরে পলিথিন দিয়ে যে অস্থায়ী দোকানগুলো আছে, সেগুলো উঠিয়ে দেওয়া হবে। শুধু ভ্যানে করে সকালে আসবে এবং রাতে চলে যাবে- এমন দোকান রাখা হবে।
দীন ইসলাম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়