গত দুই দশকে দুবাই বিশ্বব্যাপী স্বর্ণের ক্রয়-বিক্রয়ের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মধ্যপ্রাচ্যের এই শহর এখন স্বর্ণ চোরাচালান ও অর্থ পাচারের গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাফিয়া গোষ্ঠী, কূটনীতিক, এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিরা এই বাণিজ্যে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন।
স্বর্ণের পাচার ও মাফিয়াদের নিয়ন্ত্রণ
দক্ষিণ আফ্রিকা ভিত্তিক চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে দুবাইয়ে স্বর্ণ চোরাচালান করে আসছে। এ ক্ষেত্রে তারা দেশটির শিথিল আইন এবং বিনিয়োগ বান্ধব নীতিকে কাজে লাগাচ্ছে। ২০২৩ সালে আল জাজিরা প্রকাশিত একটি তদন্তে জানা যায়, কেনিয়ার বংশোদ্ভূত কামলেশ পাটনি (ওরফে ভাই পাওয়েল) আফ্রিকা থেকে বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ পাচারের কেন্দ্র হিসেবে দুবাইকে ব্যবহার করছেন। তার অতীতও স্বর্ণ চোরাচালানে বিতর্কিত। ১৯৯০ সালে তার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেনিয়ার জিডিপির ১০% সমমানের স্বর্ণ পাচারের অভিযোগ উঠেছিল।
কূটনীতিকদের ভূমিকা
জিম্বাবুয়ের কূটনীতিক উয়েবার্ট অ্যাঞ্জেলও স্বর্ণ পাচারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি তার কূটনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে চোরাচালানের মাধ্যমে দেশটির অর্থনীতিতে কালো টাকা প্রবেশ করান। আরেক প্রভাবশালী ব্যক্তি, রিক্কি দুলান (ওরফে যাজক রিক্কি), ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক পরিচয়ের আড়ালে স্বর্ণ চোরাচালানে যুক্ত ছিলেন।
স্বর্ণ বাণিজ্যের শীর্ষে দুবাই
দুবাই বর্তমানে স্বর্ণ আমদানিতে বিশ্বের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আফ্রিকার দেশগুলো থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২,৫০০ টন স্বর্ণ পাচার হয়েছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ১১৫ বিলিয়ন ডলার।
আর্থিক কেলেঙ্কারির সুযোগ
দুবাইয়ের মুক্ত বাজারনীতি, বিনিয়োগে শুল্ক ও করমুক্ত সুবিধা, এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার অভাব ব্যবসায়ীদের আকৃষ্ট করলেও একইসঙ্গে এটি আর্থিক কেলেঙ্কারির ক্ষেত্র তৈরি করছে। জাতিসংঘ ও বিভিন্ন সংস্থার মতে, এই নীতিগুলো স্বর্ণ চোরাচালান ও অর্থ পাচারকে উসকে দিচ্ছে।
বিশ্বের অন্যতম বিনিয়োগবান্ধব এই শহরটি এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বর্ণ বাণিজ্য ও পাচারের কেন্দ্র হিসেবে সমালোচনার মুখে পড়ছে।
আরএস//বিএন