বিশেষ প্রতিনিধি: পবিত্র ঈদুল আজহার টানা ছুটিতেও বিশ্বের দূষিত শহরগুলোর তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশের ‘ফাঁকা’ হয়ে যাওয়া রাজধানী ঢাকা। কলকারখানা বন্ধ, যান চলাচল তুলনামূলকভাবে কম থাকলেও শহরটির বাতাস বেশ অস্বাস্থ্যকর রয়ে গেছে।
রোববার (৮ জুন) সকাল সোয়া আটটার দিকে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক পরিবেশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ার–এর বায়ুমান সূচক অনুযায়ী, ঢাকার গড় এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) ছিল ১৫০। এটি ‘অস্বাস্থ্যকর’ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা স্বাস্থ্যঝুঁকির জন্য বিশেষভাবে উদ্বেগজনক।
যা প্রমাণ করে ছুটির দিনেও নগরীর বায়ু মানের অবনতি ঘটছে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে যথাক্রমে ভারতের দিল্লি (AQI ১৬৭) ও চিলির সান্তিয়াগো।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যানবাহন, নির্মাণকাজ, খোলা জায়গায় ময়লা পোড়ানো, এবং দুর্বল আবহাওয়াগত অবস্থান—সব মিলিয়ে ঢাকার বাতাসে সূক্ষ্ম ধূলিকণা (PM2.5) ও অন্যান্য দূষণ উপাদান জমে থাকে, যা ছুটির দিনেও স্বাভাবিক হারে কমে না।
ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোর মধ্যে গুলশানের লেকপার্ক অঞ্চল আজ সবচেয়ে বেশি দূষণের শিকার হয়। অঞ্চলটিতে AQI ছিল ১৬৩। অন্যান্য উচ্চ দূষণের অঞ্চলগুলোর মধ্যে রয়েছে কল্যাণপুর, পুরান ঢাকার বেচারাম দেউড়ি, এবং মিরপুরের ইস্টার্ন হাউজিং এলাকা।
আইকিউএয়ার জানিয়েছে, এসব এলাকায় বাসিন্দাদের স্বাস্থ্যের জন্য বায়ু এখনো ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে। তারা নাগরিকদের জন্য বিশেষ সতর্কবার্তা দিয়েছে। সেগুলো হলো: বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা, উন্মুক্ত জায়গায় কোনো ধরনের ব্যায়াম বা শারীরিক পরিশ্রম না করা, সম্ভব হলে ঘরের জানালা বন্ধ রাখা, যেন দূষিত বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে না পারে।
পরিবেশবাদী সংগঠনগুলোর মতে, এ পরিস্থিতি দীর্ঘদিনের ব্যবস্থাপনার ঘাটতির ফসল। কেবল সরকারি ছুটি বা যানবাহনের সংখ্যা কম থাকলেই দূষণ কমে যাবে, এমন ধারণা ভুল। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদে শহর ব্যবস্থাপনা, নির্মাণ খাতের কঠোর নিয়ন্ত্রণ এবং সবুজায়নের উদ্যোগ প্রয়োজন।
সব মিলিয়ে ঈদের ছুটিতে ঢাকার মানুষ কিছুটা ফাঁকা শহরের প্রশান্তি পেলেও, দূষণের ছায়া সেই প্রশান্তিকে সম্পূর্ণ ম্লান করে দিয়েছে অভিমত তাদের।