বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) নারীর প্রতি সহিংসতা এবং ধর্ষণের বিরুদ্ধে একযোগে আন্দোলন করেছেন ছাত্রশিবির, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। রবিবার (৯ মার্চ) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল থেকে শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন, যা টিএসসি, উপাচার্যের বাসভবন এবং কেআর মার্কেট হয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিক্ষোভে অংশ নেয় ইসলামী ছাত্রশিবির, ছাত্রদল, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশে বক্তারা দেশের বিভিন্ন স্থানে নারীদের প্রতি সহিংসতা ও ধর্ষণের ঘটনার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেন এবং দ্রুত বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান। তারা বলেন, ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন, যেমন ‘তুমি কে? আমি কে? আছিয়া! আছিয়া!’, ‘আছিয়ার কান্না আর না, আর না!’, ‘আমার বোন ধর্ষিতা কেন? বিচার চাই, বিচার চাই!’, ‘ধর্ষকদের ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই!’, ‘ধর্ষকদের ঠিকানা এই বাংলায় হবে না!’।
বাকৃবি শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান বলেন, “জুলাই আন্দোলনে আমরা বুকের রক্ত ঝরিয়েছি একটি আদর্শ ও স্বপ্ন নিয়ে—কোনো ধর্ষকের আশ্রয় দেওয়ার জন্য নয়। এ দেশে এখন একটি শিশুও নিরাপদ নয়। আমরা চাই, সব শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত হোক, যাতে সবাই নিরাপদে ও শান্তিতে বসবাস করতে পারে।”
ইসলামী ছাত্রশিবির বাকৃবি শাখার সভাপতি ফখরুল ইসলাম বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের বোনেরা আর নিরাপদ নয়। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছি। আমরা এমন একটি সমাজ চাই, যেখানে নারীরা নিশ্চিন্তে চলাফেরা করতে পারবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার হবে না, ভুক্তভোগীরা ন্যায়বিচার পাবে না এবং নারীরা নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাকৃবি শাখার আহ্বায়ক আজিজুল হক বলেন, “২৪ পরবর্তী বাংলাদেশে এ ধরনের ধর্ষণের ঘটনা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ধর্ষকদের একমাত্র উপযুক্ত শাস্তি হলো ফাঁসি। যতদিন তাদের ফাঁসি কার্যকর না হবে, ততদিন আমাদের আন্দোলন চলবে।”
সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি সঞ্জয় রায় বলেন, “আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের খবর শুনিনি। এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিদিন ধর্ষকদের আরও সাহস জোগাচ্ছে। সমাজে নারীদের পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করার ফলে ধর্ষণের মনোভাব গড়ে উঠছে। আমরা চাই, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধর্ষকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হোক।”
ছাত্র ইউনিয়ন বাকৃবি শাখার সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, “আমরা চাই স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার পদত্যাগ। যদি তা না হয়, তবে অবশ্যই ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে। বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে এবং ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষকের ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।”
শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, এই আন্দোলন তাদের দাবি পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত চলবে এবং তারা ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলন আরও জোরালো করবে।