আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ প্রতিনিধি:
খোলা জায়গায় এলোমেলোভাবে পড়ে আছে ভারী যন্ত্রগুলো। এগুলোর মধ্যে কোনটির দাম প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। অন্তত ৮ বছর ধরে এগুলো পড়ে আছে। বছরের পর বছর ধরে অযত্ন-অবহেলায় যন্ত্রগুলো পড়ে থাকায় ঝড়বৃষ্টি ও রোদে এগুলোতে মরিচা পড়ে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। এ চিত্র নওগাঁর বদলগাছী উপজেলা বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) কার্যালয় চত্বরের।
লোকবলের অভাবে আধুনিক কৃষি যন্ত্রগুলো ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। তবে খুব শিঘ্রই চালুর উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে তাঁরা জানান।
বিএমডিএ বদলগাছী উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কৃষির আধুনিকায়নের জন্য সরকার বড় অংকের টাকা খরচ করে বেশ কিছু আধুনিক কৃষি যন্ত্র চীন থেকে নিয়ে আনা হয়। আধুনিক এসব কৃষি যন্ত্রের সঙ্গে কৃষকদের পরিচিত করানো ও কৃষি যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে কৃষকদের চাষাবাদ সহজ করতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় বিএমডিএ কার্যালয়গুলোতে প্রদর্শনীর জন্য বিতরণ করা হয়। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০১৭ সালে বদলগাছী বিএমডিএ কার্যালয়ে প্রদর্শনীর জন্য একটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টার (শস্য কাটা ও মাড়াই যন্ত্র), জমি চাষের মিনি ট্রাক্টর ও একটি রাইস প্লান্টার (ধানের চারা রোপন যন্ত্র) আনা হয়। উদ্দেশ্য ছিল লোকবল নিয়োগ দিয়ে ফসলের মাঠে যন্ত্রগুলো ব্যবহার করে কৃষকদের সঙ্গে এগুলোর পরিচয় করানো এবং কৃষকদের চাষাবাদ সহজ করা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। যন্ত্রগুলো আনার পর থেকে ব্যবহারের একটিবারের জন্যও বিএমডিএ অফিস চত্বরের বাইরে বের করা হয়নি। দীর্ঘ দিন খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে যন্ত্রগুলো।
সম্প্রতি বদলগাছী বিএমডিএ কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অফিস চত্বরে বাইরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে দানবীয় যন্ত্রগুলো। যন্ত্রগুলোর বিভিন্ন অংশে মরিচা পড়ে ক্ষয় হয়ে গেছে। মরিচা পড়ে কোথাও ধাতব অংশ ভেঙে গিয়ে তৈরি হয়েছে বড় ছিদ্র।
বদলগাছী বিএমডিএ কার্যালয় চত্বরে পড়ে থাকা ওই তিনটি কৃষি যন্ত্রের দাম কতো এ ব্যাপারে বিএমডিএ কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য জানাতে পারেনি।
ওই তিনটি যন্ত্রের দাম কতো হতে পারে জানতে চাইলে বদলগাছী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাবাব ফারহান বলেন, ‘এ ধরণের কৃষি যন্ত্র কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে ভর্তুকীতে কৃষকদের মাঝে বিক্রি করা হয়েছিল। সাধারণত ৫০ শতাংশ ভর্তুকি দিয়ে যন্ত্রগুলো বিক্রি করা হয়। চীন থেকে আমদানি করা একেকটি কম্বাইন্ড হার্ভেস্টারের মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা। আর মিনি ট্রাক্টর ও রাইস প্লান্টার যন্ত্রের প্রতিটির দাম প্রায় ১৫ লাখ টাকা করে। সেই হিসেবে ওই তিনটি যন্ত্রের মূল্য ৬০ লক্ষ টাকার ওপরে।’
কৃষি কাজে ব্যবহারের জন্য আনা যন্ত্রগুলো বছরের পর বছর ধরে খোলা আকাশের নিচে পড়ে থেকে নষ্ট হতে দেখে স্থানীয় কৃষকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
বদলগাছী উপজেলা সদর ইউনিয়নের কলেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল করিম বলেন, ‘লাখ লাখ টাকার যন্ত্র পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। লোকবল নেই, তাহলে এসব যন্ত্র আনার কি দরকার ছিল? সরকারি অফিসের কাম-কাজই এ রকম। যন্ত্র চলুক আর না চলুক তাতে কিছু আসে যায় না। কোনো জবাবদিহিতা নেই। সরকারের টাকা অপচয় মানে জনগণের টাকা অপচয়। এই যন্ত্রগুলো নষ্ট হলে জনগণেরই ক্ষতি। এই যন্ত্রগুলো নষ্ট হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ বিএমডিএ অফিসের কর্মকর্তারা দায়ী। তাঁরা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমডিএ নওগাঁ অঞ্চল-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রেজাউল ইসলাম বলেন, আমি নওগাঁতে নির্বাহী প্রকৌশলী হিসেবে সম্প্রতি দায়িত্বে আসায় এ বিষয়ে তেমন কিছু জানি না। এ বিষয়ে বদলগাছী বিএমডিএ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী বিস্তারিত বলতে পারবেন।
বিএমডিএর বদলগাছী উপজেলা কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইন্তেখাফ আলম বলেন, ‘নওগাঁ-২ (বদলগাছী ও মহাদেবপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত আকরাম হোসেন চৌধুরী যখন বিএমডিএর চেয়ারম্যানের দায়িত্বে ছিলেন সেই সময় তিনি ওই তিনটি কৃষি যন্ত্র বদলগাছীতে নিয়ে আসেন। সম্ভবত ২০১৭ সালে যন্ত্রগুলো বদলগাছী বিএমডিএ কার্যালয়ে আনা হয়। নওগাঁতে আর কোনো উপজেলায় এ ধরণের যন্ত্র প্রদর্শনীর জন্য দেওয়া হয়নি। যন্ত্রগুলো আনা হলেও লোকবল নিয়োগের অভাবে যন্ত্রগুলো একদিনও ব্যবহার করা যায়নি। যন্ত্রগুলো ব্যবহারের জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যন্ত্রগুলো ব্যবহার উপযোগী রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখা হবে। ব্যবহার উপযোগী থাকলে লোকবল নিয়োগের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হবে।’