আরিফুল ইসলাম রনক, নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
নওগাঁর বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তদন্তকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরেন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে।
এর আগে গত ১৩ মে এলাকাবাসী প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতির বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেন এবং ১৪ মে জেলা প্রশাসক,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন দপ্তরে এলাকাবাসীর লিখিত অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, নওগাঁ সদর উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বলিহার দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩টি দিঘি ও পুকুর ২টি সহ সম্পত্তি রয়েছে প্রায় ৮০ বিঘা। যা থেকে প্রতি বছর স্কুলের আয় হয় ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টাকা। এত আয় হওয়া সত্ত্বেও স্কুলটির অবকাঠামোগত সংস্কার, শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান উন্নয়ন এবং স্কুলের সার্বিক উন্নয়নে কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রধান শিক্ষক আফজাল হোসেন গত ১৫ বছর ধরে স্কুলের এসব টাকার আয় ব্যায়ের হিসেব গরমিল করে টাকা পাহাড় গড়েছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, শিক্ষক, নৈশ প্রহরী, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক, পদে নিয়োগ দিয়ে ৪৭ লক্ষ টাকার নিয়োগ বাণিজ্য করা হলেও স্কুলের উন্নয়নমূলক খাতে জমা করা হয়নি একটি টাকাও। এছাড়াও গত ১২-১৩ বছরের স্কুলটির বাৎসরিক আয় প্রায় ১ কোটি ৯০ লক্ষ টাকা। যা থেকে সামান্য কিছু টাকা বিদ্যালয়ের খাতে জমা দিলেও ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে অর্থ আত্মসাৎ করেছে। স্কুলে যোগদানের আগে প্রধান শিক্ষকের তেমন কিছুই ছিলোনা কিন্তু গত ১৫ বছরে সে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ হবার মত অবস্থা।
সরেজমিনে দেখা যায়, স্কুলের শ্রেনী কক্ষের বেশির ভাগ জানালা ভাঙ্গা, ফ্যানের অচল অবস্থা, ভাঙ্গা ব্রেঞ্চসহ ব্যবহার করার অনুপোযোগী টয়লেট। ছাত্র-ছাত্রীদের টয়লেট ব্যবহার করার প্রয়োজন হলে স্কুলের বাইরে যেতে হয়। দেখা যায় মেয়েদের কমনরুমে স্কুলের নৈশ্যপ্রহরী বিছানা করে ঘুমানোর পাশাপাশি দিনে বিশ্রাম নিয়ে থাকে।
স্কুলের সাবেক ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। সে সময় তাদের কাছ থেকে ২২ লক্ষ টাকা নিয়োগ বাবদ ঘুষ নেয়। আমি নিজেও ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে দোষ শিকার করেছি। আমি এমন দুর্নীতিবাজ শিক্ষকের অপসারন চাই।
স্থানীয় সেলিম রেজা বলেন, ২০১১ সালে আফজাল হোসেন প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করার পর থেকেই বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির আখড়ায় পরিনত করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি। আমরা যদি সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচার না পাই তাহলে এলাকাবাসী মিলে আরও বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দিবো।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো.আফজাল হোসেন বলেন, কমিটি গঠন সংক্রান্ত মতবিরোধের কারণে একটি পক্ষ উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে আমার আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ করছেন।
এ বিষয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ ওয়াসিউর রহমান বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তদন্ত কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। অনিয়ম-দুর্নীতি ও ও অর্থ আত্মসাতের সত্যতা পাওয়া গেলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এর আগে কাউকে দোষী সাব্যস্থ করা ঠিক হবে না।