সিয়াম সাধনার মাস রমজান। রমজান মাসের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো ইফতারের পূর্ব মুহূর্ত। ইফতার শব্দটি আরবি ফুতুর শব্দ থেকে এসেছে। ফুতুর- অর্থ নাস্তা। ইফতারের অর্থ খোলা, উন্মুক্ত করা, ছেড়ে দেওয়া ইত্যাদি। ইসলামি পরিভাষায় সূর্যাস্তের পর খেজুর, পানি বা কোনো খাদ্যদ্রব্য ভক্ষণের মাধ্যমে রোজা ছেড়ে দেওয়াকে ইফতার বলে।
পরিবারের সবাই মিলে একসাথে ইফতারের করতে পারলে ভিন্ন এক আনন্দ অনূভুতির মাত্রা যোগ হয়। তবে যারা পড়ালেখার জন্য পরিবার-পরিজন থেকে দূরে তাদের শিক্ষাঙ্গন বা ক্যাম্পাসই হয়ে ওঠে অন্য আরেকটি পরিবার।
রমজান মাসে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনচিত্র টাও ঠিক এরকমই। এছাড়াও সকলে একসাথে ইফতার করার মধ্য দিয়ে সবাই একে অপরের কাছাকাছি আসতে পারে, বাড়ে ভ্রতৃত্বের বন্ধন। বন্ধু-সিনিয়র-জুনিয়র সকলে যেন একই বন্ধনে আবদ্ধ।
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিকেল হলেই বাড়ে প্রাণচঞ্চলতা। ইফতারের আয়োজনে ব্যস্ত শিক্ষার্থীরা। শুধু কেন্দ্রীয় খেলার মাঠই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের আসে পাশে ছোট ছোট দলে ইফতার করতে বসে শিক্ষার্থীরা। এ যেন রমজান মাসের নিত্যদিনকার দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসে পাশের দোকানগুলোতেও দেখা যায় ইফতারি বিক্রয় নিয়ে কর্মব্যস্ততা।
রমজানের আগে মাঠের আনাগোনার কারণ ছিল ভিন্ন। ক্রিকেট, ফুটবল নানান খেলায় মেতে উঠতো শিক্ষার্থীরা। এখন সেই সবুজ ঘাসে প্রাণচঞ্চলতা যেন ভিন্ন চিত্র ধারণ করে। প্রশান্তির ছোঁয়া খুঁজতেই সকলের আবির্ভাব। সবুজ ঘাসের বুক চিরে পাটি কিংবা পত্রিকার ছেড়া অংশ বিছিয়ে সবাই বসে ইফতার নিয়ে। টুকটাক সবাই একে অপকের সাহায্য করে নিজের অংশগ্রহণ জানান দেয়। সকলে একত্রিত হয়ে বসে গল্প করেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা। সারা দিনের রোজার ক্লান্তির কথাও যেন ভুলে যায় সবাই।
বন্ধু সার্কেলর বাইরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ক্রিয়াশীল সংগঠন , এসোসিয়েশন, ক্লাব, বন্ধু-বান্ধবদের নিয়ে, শিক্ষক-শিক্ষার্থী একত্রে মিলে প্রতিদিন কোনো না কোনো আয়োজন করেই থাকে। তাই তো পরিবার পরিজন থেকে দূরে থেকেও ক্যাম্পাসই হয়ে ওঠে আরেকটি পরিবার।
ইফতারে মুসলিম শিক্ষার্থীদের বাইরেও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে অন্য ধর্মাবলম্বী শিক্ষার্থীরাও। গড়ে উঠে ধর্মীয় সম্প্রতি।
ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থী ঈশিতা দাশ বলেন, ” ক্যাম্পাসজুড়েই ইফতার আয়োজন প্রতিদিনই জমজমাট, অন্য ধর্মেও হয়েও বিভাগের, এসোসিয়েশনের ইফতার আয়োজনে নিজের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছি, আমি মনে করি এ আয়োজন মানুষের সাথে মানুষের মেলবন্ধন সৃষ্টি করবে।”
এছাড়াও আরেক শিক্ষার্থী মুজিবুল ইসলাম মুজিব জানায়, “বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে সবথেকে কষ্টের বিষয় হচ্ছে পরিবার থেকে দূরে থাকা। আর সেটা যদি হয় রমজান মাস তাহলে সেই দুঃখ কষ্টের সীমা থাকে না। কিন্তু এত দুঃখ কষ্টের ভিড়ে প্রশান্তির নিশ্বাস ছাড়া যায় তখনি যখন বন্ধু-বান্ধব বা কোনো বড় ভাই বলে আজ সবাই একসাথে ইফতার করবো। সিনিয়র জুনিয়র ব্যাচমেটসহ চেনা-অচেনা সকলে যখন একসাথে ইফতারের জন্য বসি,সবাই সবকিছু ভুলে একই প্লেটে খাওয়ার মুহূর্ত যেন অন্যরকম এক অনুভূতি। ক্যাম্পাস ও সেন্ট্রাল ফিল্ডের চারিদিকে যে উৎসব মুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা সত্যি পরিবার ছেড়ে দুরে থাকার কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।”
সন্ধ্যা যখন পূর্ব দিগন্তে ঘনিয়ে আসতে থাকে ও দিন চলে যায় এবং পশ্চিমে সূর্য ডুবে যাওয়ার আগ মুহূর্তেই সকলে দোয়া দুরুদ শেষ করে প্রস্তুত হয় ইফতারের জন্য। এরপর মাগরিবের আজানের মধ্য দিয়েই সকলে ইফতারি শুরু করেন। এসময় অনেক পথিচারী কিংবা রিক্সাচালক ভ্যানচালকও অংশ নেন শিক্ষার্থীদের সাথে ইফতারি করতে।
রিভা সুলতানা,
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।