রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হল এবং শেখ সাহেরা খাতুন হল যেন রূপ নিয়েছে এক রঙ্গমঞ্চে। শিক্ষার্থীদের ভোগান্তিতে ফেলে ডাইনিং-ক্যান্টিনে হুটহাট ম্যানেজার পরিবর্তন, অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়া,খাবারের মানের নিম্নগামিতা যেন হল দুটির নিত্যদিনের ঘটনা। হল কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন দুই হলের হাজারো শিক্ষার্থী। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টরা আঙ্গুল তুলছেন হল প্রভোস্টের দিকে।
কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনকে ঘিরে ক্ষমতাসীন ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির ঘটনা দিয়ে শুরু হয়ে ক্যান্টিন ম্যানেজারের গলায় রামদা ঠেকানোর অভিযোগসহ স্বয়ং ক্যান্টিন ম্যানেজারকে বিদায় করে দেয়ার পর এবার হলটির ক্যান্টিন ভাড়া দেওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে জটিলতা। অনুসন্ধানে সাবেক ক্যান্টিন ম্যানেজারের বিরুদ্ধে একই ক্যান্টিনকে দুই ব্যাক্তির কাছে ভাড়া দেয়া এবং হল প্রভোস্টের বিরুদ্ধে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই ডাইনিং-ক্যান্টিন ভাড়ার বিষয় উঠে এসেছে।
জানা গেছে, সাবেক ক্যান্টিন ম্যানেজার জাহিদের গলায় ছাত্রলীগ নেতা সজীব ও আরিফের রামদা ঠেকিয়ে হত্যার হুমকির ঘটনার পর বিনা নোটিশে জাহিদকে ছাড়তে বলা হয় ক্যান্টিনের দায়িত্ব। এ ঘটনার পর গত আড়াই মাসে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই পরপর ৩ ব্যাক্তিকে ক্যান্টিনের দায়িত্ব দিলেও এখনও বন্ধ রয়েছে নজরুল হলের ক্যান্টিন। ক্যান্টিন ম্যানেজার ইমন ১ মাস ৪ দিন, শাহাদত ৬ দিন এবং বাদল ২৫ দিন ক্যান্টিন চালান। বাদলের পর আবার কাজল চালানো চেষ্টা করলেও এক সপ্তাহের বেশি স্থায়ী হতে পারেননি। এভাবে ক্যান্টিন ম্যানেজারদের আসা যাওয়ায় হলটির ক্যান্টিন যেন একটি নাট্যমঞ্চে রূপ নিয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে শুনছি ক্যান্টিন বন্ধ, ম্যানেজার ভেগেছে। সর্বশেষ ১৩ মার্চ কাজল ক্যান্টিন ছাড়ার পর গত ১৫ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে হলের ক্যান্টিনটি। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জাহিদ থেকে বকেয়া ভাড়া তুলতে ব্যর্থ হওয়ায় এবার পূর্বের জামানত ৩০ হাজারের পরিবর্তে দেড় লাখ টাকা চাওয়া হচ্ছে।
এ ব্যাপারে ড. কামাল উদ্দিন আহমদ জানান,”হল কর্তৃপক্ষ চাইলে জামানত ইচ্ছেমত বাড়াতে পারে। জাহিদ শিক্ষার্থীদের কাছে টাকা পেতো। সেটি আমরা বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের দিতে নিষেধ করেছি। দেখি, নতুন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লিস্ট ধরে টাকাগুলো হল কর্তৃপক্ষ নিজে আদায় করতে পারে কিনা।”
অন্যদিকে শেখ সাহেরা খাতুন হলের ডাইনিং-ক্যান্টিনের অব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি চরমে। জানা যায়,গত ১৩ই মার্চ বাবুর্চির অসুস্থতার দোহাই দিয়ে বিনা নোটিশে ডাইনিং বন্ধ করলেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা হল প্রশাসন গ্রহণ করেনি। ডাইনিং বন্ধের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে হল ক্যান্টিনের স্বেচ্ছাচারিতা বেড়েছে বহুগুণ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন,”ক্যান্টিনের খাবারের মান ও পরিমাণ যেমন কম, ঠিক তেমনি অন্যান্য হলের তুলনায় দাম বেশি। প্রায় প্রতিদিনই বাসি খাবার দেওয়া হয়,ক্যান্টিনের মালিক, মালিকের বউ এমনকি ক্যান্টিন বয়দের ব্যবহারে মনে হয় যে ওরা আমাদের খাবার দিয়ে দয়া করছেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হল প্রভোস্ট ড. মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, “ডাইনিংয়ে নতুন বাবুর্চি নিয়োগ সম্ভব হয়নি। ক্যান্টিনের ব্যাপারে অভিযোগ গুলো আমার কাছে এসেছে, আগামী সপ্তাহে দেখি কি করা যায়।”
মাকতুম আল মুমিত
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি