বিয়ে শুধু ভালোবাসা বা সামাজিক বন্ধনের বিষয় নয়, এর সঙ্গে জড়িত ভবিষ্যতের শারীরিক, মানসিক ও পারিবারিক সুস্থতা। বর্তমান সময়ে অনেক দম্পতি বিয়ের পরে অনাকাঙ্ক্ষিত স্বাস্থ্য সমস্যার মুখোমুখি হন, যা আগে থেকেই পরীক্ষা করালে এড়ানো সম্ভব হতো। তাই বিয়ের আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো একান্ত প্রয়োজন।
হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস (থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা):
থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তের রোগ। বর ও কনে উভয়েই যদি বাহক হন, তাহলে সন্তানের মারাত্মক জটিলতা তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশে প্রতি ১০ জনে ১ জন থ্যালাসেমিয়া বাহক।
রক্তের গ্রুপ ও Rh টাইপিং:
রক্তের Rh ফ্যাক্টর (পজিটিভ/নেগেটিভ) নিয়ে মিল না থাকলে গর্ভাবস্থায় জটিলতা হতে পারে, যেমন—ইরাইথ্রোব্লাসটোসিস ফিটালিস। তবে সময়মতো চিকিৎসা নিলে তা প্রতিরোধযোগ্য।
যৌনবাহিত রোগের স্ক্রিনিং:
এইডস (HIV), সিফিলিস, গনোরিয়া, ক্ল্যামিডিয়া, হেপাটাইটিস বি ও সি—সবই যৌন সংস্পর্শে ছড়াতে পারে। বিয়ের আগে পরীক্ষা ও প্রয়োজনে চিকিৎসা ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ সম্পর্ক নিশ্চিত করে।
ফার্টিলিটি (বন্ধ্যত্ব) পরীক্ষা:
নারীদের ক্ষেত্রে পিসিওএস, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা ইউটারাইন সমস্যার পরীক্ষা জরুরি। পুরুষদের ক্ষেত্রে বীর্যের গুণগত মান ও পরিমাণ পরীক্ষাও গুরুত্বপূর্ণ।
বংশগত রোগের ইতিহাস মূল্যায়ন:
পারিবারিক ইতিহাসে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, সিজোফ্রেনিয়া, ক্যানসার ইত্যাদি থাকলে জেনেটিক কাউন্সেলিং দরকার।
ক্রনিক রোগের স্ক্রিনিং:
ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, থাইরয়েড ডিজঅর্ডার, কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা সম্পর্কিত পরীক্ষাগুলো করে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া যায়।
মানসিক স্বাস্থ্য মূল্যায়ন:
ডিপ্রেশন, বাইপোলার ডিজঅর্ডার, সিজোফ্রেনিয়ার মতো রোগ বিয়ের আগে শনাক্ত করে চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। বিয়ে কোনো মানসিক রোগের ওষুধ নয়।
টিকাদান ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:
হেপাটাইটিস বি, রুবেলা, টাইফয়েড, টিটানাসের মতো ভ্যাকসিন দেওয়া আছে কি না, তা যাচাই জরুরি। গর্ভধারণের আগেই টিকাদান ভবিষ্যৎ সন্তানের জন্য নিরাপদ।
জেনেটিক কাউন্সেলিং (বিশেষ করে নিকটাত্মীয়দের বিয়ে হলে):
ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের মধ্যে বিয়েতে জেনেটিক সমস্যা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই জেনেটিক পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং করলে ভবিষ্যতের জটিলতা এড়ানো সম্ভব।
বিয়ের আগে স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুধু নিজেকে নয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুস্থ রাখার একটি দায়িত্বশীল পদক্ষেপ। এই পরীক্ষাগুলো করানো মানেই সম্পর্ককে আরও গভীর, স্বাস্থ্যবান ও সচেতনভাবে এগিয়ে নেওয়া। মনে রাখুন, সচেতনতা মানেই সুরক্ষা।