বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ৪টি আবাসিক হলে সোমবার (১৬ ডিসেম্বর) আয়োজিত হয়েছে হল ফেস্ট-২০২৪। গত ৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠানটি আয়োজন করার কথা থাকলেও নানা সমস্যার জন্য সময় পিছিয়ে নেয়া হয়।
সন্ধ্যায় অতিথিদের আসন গ্রহণ ও পবিত্র ধর্মগ্রন্থ থেকে পাঠের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জুলহাস উদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা। বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন বুটেক্সের অ্যালামনাইগণ।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মো. জুলহাস উদ্দিন বলেন, হল হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণকেন্দ্র।বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নতিতে হলের অবদান অনেক। হলে যেসব সমস্যা রয়েছে, দ্রুতই তা সমাধান করা হবে। তিনি বলেন এখানে অনেক অ্যালামনাই এসেছে। অ্যালামনাইরা আমাদের একটা অনেক বড়ো সম্পদ। যেকোনো প্রয়োজনে আমরা অ্যালামনাইদের কাছে যেতে পারবো। সামনে অ্যালামনাইদের নিয়ে বুটেক্সে অনুষ্ঠান আয়োজন করার ইচ্ছা রয়েছে।
তিনি বিদায়ী ব্যাচকে নিয়ে বলেন, তোমাদের জন্য এখন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরির জন্য সোনালী সময়। আমি যখন বের হয়েছি তখন চাকরি পাবো কি পাবো না সেটা নিয়ে চিন্তা ছিলো। এখন কোনো চিন্তা নাই। যারা বিদায় নিচ্ছো তোমাদের ভবিষ্যৎ যাতে সুন্দর হয় সে কামনা করি। যারা অতিথি হিসেবে এসেছেন তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অনেকে অনেক আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।
সিরাতুল মুস্তাকিম ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার ফয়সাল বিল আলম স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, আজকে প্রায় ১৫ বছর পর আজিজ হলে আসলাম। এটি এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমি হলে থাকতাম না। কিন্তু একটা মজার ব্যাপার হলো সব হলেই দাওয়াত পেতাম। তিনি আরো বলেন, বুটেক্সিয়ানদের প্রাণের দাবি বুটেক্স অ্যালামনাই এসোসিয়েশন। যত দ্রত সম্ভব অ্যালামনাই এসোসিয়েশন গঠন করার আহ্বান জানাই। আজকে কেনো বুটেক্সের উন্নতিতে অ্যালামনাইকে যুক্ত করা হবে না? তাদের সুযোগ দেওয়া উচিত।
হল ফেস্টের আয়োজন নিয়ে জিএমএজি ওসমানী হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ৪৫ ব্যাচের বিদায় উপলক্ষে এই আয়োজন হলেও সকল ব্যাচের শিক্ষার্থীরা এটি উপভোগ করেছে। এই ধরনের আয়োজন প্রতিবছর হবে এই আশা ব্যক্ত করছি।
শহীদ আজিজ হলের হল প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক ড. এমদাদ সরকার উপস্থিত সকল শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন শিক্ষার্থীরা যাতে প্রাণবন্তভাবে ফেস্টে থাকে এর জন্য র্যাফেল ড্র এর আয়োজন করা হয়। এত ব্যস্ততার মাঝেও সময় দেওয়ার জন্য দেওয়ার জন্য আগত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করি। শিক্ষার্থীরা যেন হলের নিয়ম-শৃঙ্খলা সুন্দরভাবে মেনে চলে এবং পরিশেষে সবার সুস্বাস্থ্য কামনা করি।
হল ফেস্ট নিয়ে ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হামিদ আজাদ জানান, এই ধরনের আয়োজন আমাদের হলগুলোকে নতুনভাবে প্রানশক্তি দেয়। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পেরে এতদিনের পরিশ্রম সার্থক মনে হচ্ছে। লেজুড় বৃত্তিক ছাত্রসংগঠনের অনুপস্থিতিতে এই আয়োজনে আমাদের সর্বোচ্চটা দেয়া সম্ভব হয়েছে। আগামী বছরও এই ধরনের আয়োজন করার চেষ্টা থাকবে।
ফেষ্ট উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী খেলাধুলার আয়োজন করা হয়। এতে হলগুলোতে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলো। বিভিন্ন হলগুলোতে শর্টপিচ ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, ক্যারাম, টেবিল টেনিস, দাবা, কার্ড , ডার্টসহ ইত্যাদি খেলার আয়োজন করা হয়৷ অনুষ্ঠানে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার বিতরণ করা হয়।
আজিজ হলে প্রতি ব্যাচে মেধাবী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও হলে সবচেয়ে সুন্দর, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন তিনটি কক্ষের শিক্ষার্থীদের পুরষ্কৃত করা হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান আকর্ষণ ছিলো র্যাফেল ড্র। ১২ জন ভাগ্যবান বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেওয়া হয়। এরপর প্রত্যেক ব্যাচের জন্য বিশেষ নৈশভোজের আয়োজন হয়।
ছাত্রীহলে আলপনার সাজে সেজে উঠে এবং বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
পরিশেষে নৈশভোজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশে শেষ হয় হল ফেস্ট-২০২৪। সর্বোপরি প্রত্যেক শিক্ষার্থীদেরই আশা প্রতি বছরই এইরকম বড় পরিসরে আয়োজন হোক হল ফেস্ট।