যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে রোববার (২৬ মার্চ) হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (হাবিপ্রবি) ৫৪ তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপিত হয়েছে।
এ দিন সূর্যোদয়ের সাথে সাথেই বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য কর্তৃক প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে দিবসের কর্মসূচি শুরু হয়। পতাকা উত্তোলনের পরপরই উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে স্থাপিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এঁর প্রতিকৃতিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করেন।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯.৩০ টায় উপাচার্যের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের অংশগ্রহণে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম. কামরুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহিদগণের স্মৃতির প্রতি পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মোঃ সাইফুর রহমান, প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশীদ,স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব ও ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক ড.মোঃ মাহাবুব হোসেন । ক্রমান্বয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন বিভিন্ন অনুষদের ডীনবৃন্দ,শিক্ষক সমিতি, শিক্ষকগবৃন্দের বিভিন্ন সংগঠন, হাবিপ্রবি ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ, কর্মকর্তা-কর্মচারী সংগঠনসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।
পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সকাল ১০ টায় মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষ্যে উপাচার্যের বাণী বিতরণ করা হয়। বাণীতে উপাচার্য বলেন, আজ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস, পরাধীনতার শিকল ভাঙ্গার দিন। বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের দিন ২৬ মার্চ। মহান স্বাধীনতা দিবসে আমি প্রথমেই গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি স্বাধীনতার মহান স্থপতি, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে যাঁর অবিসংবাদিত নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধ সংগঠিত ও পরিচালিত হয়েছিল। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহিদ এবং ২ লাখ সম্ভ্রমহারা মা-বোনকে।
স্বাধীনতা অর্জনে ১৯৭১ সালের মার্চ এক মহাজাগরণের মাস। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বায়ত্বশাসন ও স্বাধীকার আন্দোলন এ মাসে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরিত হয়েছিল।
বায়ান্নোর ভাষা আন্দোলন, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণ অভুত্থ্যান, সত্তরের জাতীয় নির্বাচন, একাত্তরের মার্চে অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণ ও ২৫ মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা শুরু করলে বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে প্রিয় বাংলাদেশকে স্বাধীন ঘোষণা করেন। সে আহ্বানে সাড়া দিয়ে এ দেশের মুক্তি পাগল মানুষ শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ। শুরু হয় আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম আর সাহসিকতার এক নতুন অধ্যায়। অবশেষে ৩০ লক্ষ শহিদের রক্ত, ২ লাখ মা—বোনের সম্ভ্রম আর অগণিত মানুষের সীমাহীন দুঃখ কষ্টের বিনিময়ে আমরা পাই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ছিল একটি গণতান্ত্রিক ও বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া।
তিনি বাণীতে আরো বলেন, বঙ্গবন্ধু সবসময় স্বাধীন বাংলাদেশের পাশাপাশি একটি সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখতেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার হাস, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, গড় আয় বৃদ্ধিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে।
এরপর সকাল ১০ টা ০৫ মিনিটে টিএসসি প্রাঙ্গণে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন উপাচার্য। পরবর্তীতে ১০ টা ৫৫ মিনিটে শিশুদের অংশগ্রহণে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ১১ টা ৩০ মিনিটে শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগিতার সকল বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন হাবিপ্রবি উপাচার্য । বাদ জোহর হাবিপ্রবি’র কেন্দ্রীয় মসজিদে শহিদগণের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বিশেষ দোয়া করা হয়। এছাড়াও দিনটি উপলক্ষ্যে প্রশাসনিক ভবন, প্রধানগেট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিত্তি প্রস্তর চত্তরে আলোকসজ্জার ব্যবস্থা করা হয়।
এদিকে, ইতিহাসের জঘন্যতম অপারেশন সার্চলাইটের অধীনে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যে বর্বরতা চালিয়েছিল তার স্মরণে মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১১.০০ থেকে ১১.০১ মিনিট পর্যন্ত হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং হাবিপ্রবি কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে ব্ল্যাকআউট কর্মসূচি পালন করা হয়। এসময় পুরো ক্যাম্পাস অন্ধকারে ঢেকে যায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য এর উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে সকলে ১ মিনিট নীরবতা পালন শেষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হয়।
নাঈম ইসলাম সংগ্রাম |হাবিপ্রবি