নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে রাবি শিক্ষক নেটওয়ার্কের প্রতিবাদ
নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। রোববার (৯ মার্চ) সকাল সাড়ে ১১ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ‘বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক’র ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় শিক্ষকদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দেশে নারী নিপীড়নের ঘটনা নতুন নয়। এটি দীর্ঘ দিনের ঘটনা। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাসকদের দায়িত্বহীন আচরণ। বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এসেও কখনোই এমন আচরণ কাম্য ছিল না। সকলকে নিপিড়ন-সহিংসতার বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে। দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
সমাবেশে ফোকলোর বিভাগের অধ্যাপক সুস্মিতা চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের ক্যাম্পাস এতদিন নিরব ছিল, কোনো আওয়াজ পাচ্ছিলাম না। কিন্তু গতকাল রাত থেকে ক্যাম্পাসে যেভাবে আমাদের শিক্ষার্থীরা ধর্ষণের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে উঠেছে, ছাত্রীরা যেভাবে হল থেকে বেড়িয়ে এসেছে, এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের। আমাদের দেশে নারী নির্যাতনের ঘটনা দীর্ঘদিনের। এ ঘটনা নতুন না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হচ্ছে শাসনভারের লোকদের দায়িত্বহীন আচরণ।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিপ্লব পরবর্তী সময়ে এসেও কখনোই এমন আচরণ আমাদের কাম্য ছিল না। গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ভেবেছিলাম নতুন পরিস্থিতি দেখতে পারব। কিন্তু তা আমরা দেখতে পারছি না। যে দেশে নিপীড়ককে যখন ফুল-পাগড়ি দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়, সেদেশের আইন শৃঙ্খলা কতটা ঠিক আছে তা আমাদের বুঝতে বাকি নেই। তাই আপনাদের সকলকে কথা বলতে হবে। এই আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। সেইসঙ্গে শাসকদের বলতে চাই দোষীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।’
নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক কাজী সুস্মিন আফসানা বলেন, নারী কোথায় নিরাপদ? রাস্তায় না, দোকানে না, ঘরে না, তাহলে কোথায় নিরাপদ? এখন আসলে ঘটেছে নারীর অস্তিত্ব নিয়ে টানাটানি পড়ে গিয়েছে। প্রত্যেকটা ঘটনায় এই সাক্ষ্য দিচ্ছে যে নারীর অস্তিত্বকে যেন না দেখা যায়, ঘরে ঢুকলেও যেন না দেখা যায়; সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই নারীদের বিচার চাইতে হবে। শুধু বিচার চাওয়া নয়, সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের কর্ম। আমরা কোনো জায়গা ছাড়বো না। আমরা কথা বলব ও প্রতিবাদ গড়ে তুলব।
তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানে একটি নারী নিপীড়ন বিরোধী সেল থাকা জরুরি। সেইসঙ্গে যেন সেলটা কার্যকর থাকে। পুলিশকে আরও সক্রিয় করতে হবে। সবশেষ যারা নিপিড়ন-সংহিসতা করছে, তাদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
প্রতিবাদ সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার। এ সময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী উমামা। প্রতিবাদ সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক আ-আল মামুন, একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সেলিম রেজা নিউটন, নাট্যকলা বিভাগের অধ্যাপক হাবীব জাকারিয়া উল্লাস প্রমুখ ব্যক্তিগণসহ বিভিন্ন বিভাগ ও ইন্সটিটিউটের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।