বিদায় মানে যেন বিচ্ছেদের এক কবিতা, যে কবিতা হৃদয়কে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে, দু চোখ হয় অশ্রু সজল। এমনি এক অশ্রুসিক্ত বিদায় ঘটেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে। বিভাগটির প্রথম ব্যাচ (২০১৭-১৮) সেশনের বিদায় অনুষ্ঠানে কান্নায় ভেঙে পড়েন বিভাগের সভাপতি সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম।
মঙ্গলবার (০৪ জুন) কেন্দ্রীয় জিমনেসিয়ামের সামনে নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চে এ বিদায় অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় অনুষ্ঠানের সভাপতির বক্তব্যে সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের সাথে তার স্মরণীয় মুহূর্তগুলো স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হাউমাউ করে কান্নায় ভেঙে পরেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য তিনি বলেন, আমি আমার পরিবারকে দ্বিতীয় অগ্রাধিকারে রেখে প্রথম অগ্রাধিকার দিয়েছে এই বিভাগকে। আজকে ৭ বছর বিভাগের প্রতিষ্ঠাকালীন বয়স। যেখানে আমি বিন্দু মাত্র সময় বিভাগকে ফাঁকি দেইনি। আমাদের এই শ্রম কেবলমাত্র তোমাদের জন্য। আমাদের অনেক সীমাবদ্ধতা ছিল, তবে কখনই তোমাদের না দেওয়ার মানসিকতা ছিল না।
তিনি আরো বলেন, বিদায় বেলায় বলছি তোমরা প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা আমার কাছে নিজ সন্তানের সমতুল্য। ক্লাসে অথবা বাইরে সবসময় আমি তোমাদের শাষণে রাখছি। তোমরা হয়তো তাই ভেবে নিয়েছ স্যার শক্ত হৃদয় লালন করে। কিন্তু আমাদের দীর্ঘ এই সাত বছরের প্রাপ্তি যখন শুনি আমার শিক্ষার্থীরা কখনই বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অপকর্মের জন্য শাস্তির মুখোমুখি হয়নি। তার জন্যই হয়তো এই শাসন।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ব্যবসায় অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিভাগটির প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি অধ্যাপক ড. মাহবুবুল আরেফিন। এছাড়াও বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শরিফুল ইসলাম জুয়েল, প্রভাষক ইয়ামিন মাসুম ও প্রভাষক নাসির মিয়াসহ বিদায়ী ও বর্তমান প্রায় দু’শর অধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই বিদায়ী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের পুষ্প ছিটিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। এরপরে তিন ধর্মের (মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টান) পবিত্র গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। পরবর্তীতে আমন্ত্রিত অতিথিদের ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ। অতিথিদের বরণ শেষ শুভেচ্ছা বক্তব্য নিয়ে আসেন বিভাগের প্রভাষক নাসির মিয়া। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বিদায়ী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্য উপস্থাপন করেন। প্রথমার্ধের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলে দ্বিতীয়ার্ধে শুরু হয় মনোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। যেখানে নাচ, গান, কবিতা, নাটক, র্যাম্প শো ও মাল্টিপারপাস ইন্টারনেট মেল এক্সটেনশন (এমআইএমই) প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠানে বিদায়ী শিক্ষাথীদের সার্টিফিকেট ও ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি গর্বিত যে আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটা বিভাগের সাথে আমি জড়িত। এসব বিভাগের সিলেবাস আমি রচয়িতা তার মধ্যে এই ট্যুরিজম বিভাগের সিলেবাস সবচেয়ে উন্নত। আমার এই সিলেবাসের তৈরির সফলতা তখন হবে যখন কর্মক্ষেত্রে তোমরা কাজে লাগিয়ে সফলতা অর্জন করবে। বিদায় বেলায় বলবো যা কিছু পুরনো ভেঙ্গে ফেলো, নতুন কিছু করো। এই নতুন কিছু তোমাকে বাচঁতে শেখাবে। বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবী যুগ পরিবর্তনে যতগুলো সেক্টর আছে তার মধ্যে ট্যুরিজম অন্যতম। তোমরা সেই বিভাগের শিক্ষার্থী। এই বিভাগে কর্মক্ষেত্রে সর্বোচ্চ পর্যায়ে যেতে হলে চিন্তাভাবনার জগতে পরিবর্তন আনতে হবে, মনকে বড় করতে হবে। তাহলেই তোমরা ট্যুরিজম জগতের শ্রেষ্ঠ হতে পারবে।
তামিম আশরাফ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া