ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষিত বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স) ক্যাম্পাসে বুটেক্স ছাত্রদল নেতা কর্তৃক ‘বিশ্ব পরিবেশ দিবস’ উপলক্ষে গতকাল এক বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়েছে, যা ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে।
২৯ জুন (রবিবার) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে (শহীদ মিনারের পেছনে) বৃক্ষরোপণ করেন বিভিন্ন ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী, যাদের নেতৃত্বে ছিলেন মিয়া মোহাম্মদ রুবেল নামের ৪৬তম ব্যাচের একজন শিক্ষার্থী, যিনি নিজেকে ছাত্রদলের সাথে সংশ্লিষ্ট হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। গাছ লাগানোর ছবি ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লিখেছেন,
বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে সারা দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্র ঘোষিত বৃক্ষরোপণ কর্মসূচিতে আমরা।
তার ফেসবুক পোস্টে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি এবং বুটেক্স ছাত্রদলের অন্যান্য নেতাকর্মীদের ট্যাগ করা হয়েছে। তবে যেসব শিক্ষার্থী তার সঙ্গে ছিলেন, তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তারা সরাসরি ছাত্রদল কর্মী কি না—এ বিষয়ে কোনো স্বীকৃত ঘোষণা বা প্রমাণ মেলেনি।
ছাত্রদল নেতা রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে জুন-জুলাই, অর্থাৎ বর্ষাকাল বৃক্ষরোপণের উপযুক্ত সময়। আমরা কতিপয় সাধারণ শিক্ষার্থী পরিবেশকে সুন্দর রাখতে কিছু গাছ লাগিয়েছি। কাজেই এই কর্মসূচিকে রাজনৈতিক রূপ দেওয়া ঠিক হবে না।
তবে বক্তব্যে তিনি রাজনীতির প্রসঙ্গও এনেছেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলেই এখন পর্যন্ত ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করিনি। কিন্তু উপযুক্ত সময়ে আমরা আমাদের রাজনৈতিক অবস্থান ঘোষণা করবো। নিষেধাজ্ঞার নামে ছাত্রলীগকে পুনর্বাসন ও কোনো গুপ্ত সংগঠনকে অপরাজনীতি করতে দিবো না।
কেন্দ্র ঘোষিত শব্দের ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তিনি বলেন, কেন্দ্র ঘোষিত মানেই ছাত্রদল, এটা ভাবা নিতান্তই বোকামি।
ফেসবুক পোস্টটি ছড়িয়ে পড়ার পর বুটেক্স শিক্ষার্থীদের অনেকে এর বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্য করেন। অনেকেই প্রশ্ন তোলেন—নিষিদ্ধ ছাত্ররাজনীতির ছায়াতলে এমন কর্মসূচি কীভাবে ক্যাম্পাসে অনুমোদন পেল? কেউ কেউ এটিকে “ছদ্মবেশী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড” হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, ৮ আগস্ট ২০২৪ তারিখে বুটেক্স প্রশাসন প্রথম এক অফিস আদেশের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। পরবর্তীতে ২০ এপ্রিল ২০২৫ তারিখে আরেকটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় জারি ও পুনর্ব্যক্ত করা হয়। একইসঙ্গে উপাচার্য জানান, রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত কেউ ধরা পড়লে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই ঘটনাটি ওই প্রজ্ঞাপনগুলোর পর প্রথম উল্লেখযোগ্য ও বিতর্কিত ঘটনাগুলোর একটি হয়ে উঠেছে। এদিকে এই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় প্রক্টর মাহবুবুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রশাসন ব্যাপারটি খতিয়ে দেখছে এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতোমধ্যে আমরা উক্ত কার্যক্রমে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করছি।
তিনি আরো বলেন, তবে দলীয় কার্যক্রম যদি নাও হয়ে থাকে, তবুও কেউ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি ব্যতীত এভাবে ক্যাম্পাসের ভেতরে গাছ লাগাতে পারে না। সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবেও যদি এই কার্যক্রম পরিচালনা করতে হয়, সেক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমতি লাগবে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বুটেক্স এখন দাঁড়িয়ে আছে এক স্পষ্ট প্রশ্নের মুখোমুখি—পরিবেশবিষয়ক সামাজিক উদ্যোগ কি নিষিদ্ধ ঘোষণার বাইরের কোনো পথ, নাকি এটি নিষেধাজ্ঞার ভেতরেই এক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কৌশলী চর্চা, যার আড়ালে আছে ছাত্ররাজনীতির কালো ছায়া? প্রশাসনের তদন্ত এবং ভবিষ্যৎ পদক্ষেপই হয়তো সেই প্রশ্নের উত্তর দেবে।