রুশাইদ আহমেদ: তীব্র পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকটে ভোগায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) নানা স্থানের স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।
এমতাবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠদান ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিতে দ্রুত পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের দাবি জানিয়েছেন তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার সূত্র হতে জানা যায়, গোটা বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্তমানে মোটে ১০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছেন।
এদের মধ্যে চারটি একাডেমিক ভবনে চারজন, বিজয় ২৪ হল, শহীদ মুখতার ইলাহী হল ও শহীদ ফেলানী হলে একজন করে তিনজন, লাইব্রেরি ও প্রশাসনিক ভবনে একজন করে দুজন এবং উপাচার্যের বাংলোতে একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী কর্মরত রয়েছেন।
৭৫ একর আয়তনবিশিষ্ট একটি শিক্ষাঙ্গণে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের এই সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। স্বাভাবিকভাবে যে কোনো বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের ভবনগুলোর প্রতি তলায় একজন করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও, বেরোবিতে সেই সীমা ভবনপ্রতি একজন হারে আবদ্ধ রয়েছে।
এতে করে পরিপূর্ণ পরিচ্ছন্ন পরিবেশে সকল কার্যক্রম সম্পন্ন করার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। একইসঙ্গে, একজন কর্মীদের ওপর পড়ছে অত্যাধিক চাপ। এ ছাড়া, বর্ষাকালের বৃষ্টি-কাদায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবনগুলোর পরিচ্ছন্নতার পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হয়ে উঠছে।
সাধারণত, একাডেমিক ভবনগুলোতেই বেশি ভোগান্তির সম্মুখীন হচ্ছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। বিশেষ করে কবি হেয়াত মামুদ ভবন, একাডেমিক ভবন-২ ও ক্যাফেটেরিয়া ভবনের সম্প্রসারণ কাজ চলমান থাকায় উক্ত স্থানগুলো অত্যন্ত অপরিষ্কার থাকছে বর্তমানে।
এর মধ্যে কবি হেয়াত মামুদ ভবনে বৃষ্টির পানি, মানুষের পায়ে পায়ে বয়ে আসা কাদা এবং বালু, সিমেন্টের মতো নির্মাণ সামগ্রী ভবনটির সিঁড়িতে প্রায়শই পড়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ফলে এক রকম চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে স্থানটি।
কিন্তু ভবনটিতে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংকটে নিয়মিত স্থানটি পরিষ্কার রাখতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। ফলে সিঁড়ি দিয়ে চলাচলের সময় পড়ে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও দেখা দিচ্ছে।
বিষয়টি নিয়ে কবি হেয়াত মামুদ ভবনের শিক্ষার্থী মো. জাহিদ হাসান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যেখানে প্রতিটি ফ্লোরে একজন করে পরিছন্নতা কর্মী প্রয়োজন, সেখানে পুরো ভবনজুড়ে একজন করে পরিচ্ছন্নতা কর্মী রয়েছে।
জাহিদ বলেন, বৃষ্টির সময় সম্প্রসারণের কাজ চলমান রয়েছে এমন ভবনগুলোর সিঁড়ির মধ্যে পানি প্রবেশ করছে এখন। পরিচ্ছন্নতা কর্মী সংকটে সঠিক সময়ে তা পরিষ্কার করা হয়ে ওঠে না। ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে ভোগান্তির শিকার হতে হয় এবং সেখান থেকে পিছলে পড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়।
একাডেমিক ভবন-৩ এর শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, ৭৫ একরের এই ক্যাম্পাসের তুলনায় বর্তমানে কর্মরত পরিচ্ছন্নতা কর্মীর সংখ্যা অত্যন্ত অপ্রতুল। এর ফলে ক্যাম্পাসের পরিবেশ প্রায়শই অপরিচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে কাদা ভবনের ফ্লোরগুলো চলাচলের অযোগ্য হয়ে যায়।
আরিফুল আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারণ কার্যক্রমে ব্যবহৃত নির্মাণসামগ্রীও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিতে বাধার সৃষ্টি করছে। এই পরিস্থিতিতে ক্যাম্পাসের পরিবেশ সুষ্ঠু ও স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে সত্বর পর্যাপ্ত সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগ প্রদান অতীব জরুরি বলে আমরা মনে করি।
একাডেমিক ভবন-৪ এ কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিচ্ছন্নতা কর্মী বলেন, আমি একাই এই ভবনে কাজ করি। দেখা যায়, এক ডিপার্টমেন্টে ঝাড়ু দিতে গেলে আরেক ডিপার্টমেন্ট থেকেও ডাক আসে। দুদিকে সামাল দিতে গিয়ে তখন কোনোটাই ভালোভাবে করা হয়ে ওঠে না। এত কমসংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চালানো সম্ভব নয়।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতা শাখার দায়িত্বরত কর্মকর্তা এবং উপ-রেজিস্ট্রার লোকমান হাকিম বলেন, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম সংখ্যক পরিচ্ছন্নতা কর্মী কাজ করছেন।
তিনি বলেন, পূর্বতন প্রশাসন একবার বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করেছিল। বর্তমান প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে আবেদন করব। পাশাপাশি, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের কথাও ভাবছি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. শওকাত আলী বলেন, এই সংকটের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে আমরা কাজ করছি। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছু পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের বিষয় নিয়েও আমরা ভাবছি। ইউজিসিকে আমরা ইতিমধ্যে বিষয়টি জানিয়েছি।
তবে স্থায়ী পদ সৃষ্টি না করে প্রাথমিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়কে ইউজিসি আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ দিতে নিষেধ করেছে বলে জানান উপাচার্য। এর আগে এসব বিষয় নিয়ে বহু অনিয়ম হওয়ায় যথাযথ প্রক্রিয়ার অনুসরণে বিষয়টির সমাধান করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।