ভ্রমণ করতে সকলেই পছন্দ করে। অনেকের প্রিয় শখও ভ্রমণ। সুন্দর স্থানের সৌন্দর্য সকলেই উপভোগ করতে চায়। ভ্রমণ পিপাসুদের মতে, ভ্রমণের মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে ব্যাপক জ্ঞান। এর এই কারণেই পর্যটকরা সবসময়ই নতুন নতুন স্থানে বেড়াতে যাওয়ার অধীর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় বসে থাকেন।
পর্যটকদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাদের রহস্যময় ও ভয়ঙ্কর স্থানে যাওয়ার একটু বেশিই আগ্রহ থাকে। জেনে অবাক হবেন যে- বিশ্বের বেশ কিছু নিষিদ্ধ স্থান আছে, যেখানে পর্যটকদের যাওয়ার জন্য কোনো অনুমতি দেয়া হয় না। অনেকেই সেসব স্থানকে আখ্যা দিয়েছেন ভৌতিক বা রহস্যময় হিসেবে।
আসলেই কী সেসব স্থানে ভূত বা অদৃশ্য কিছু আছে? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খায় অনেকের মধ্যেই। চলুন আজকে জেনে নেয়া যাক সেই ভূতুড়ে কিছু স্থান সম্পর্কে-
১। লাসকক্স গুহা, ফ্রান্সঃ
লাসকক্স গুহায় জনসাধারণের প্রবেশ নিষিদ্ধ। ফ্রান্সে অবস্থিত এই গুহাটি ভূতুড়ে নয়, বরং এর দেওয়ালে আদিম মানুষের আঁকা চিত্র রয়েছে। এই চিত্রগুলো সংরক্ষণের জন্যই প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ১৯৪০ সালে আবিষ্কৃত এই গুহায় প্রায় ১৭ হাজার বছরের পুরোনো ছবি পাওয়া গেছে। প্রথম দিকে পর্যটকদের গুহায় প্রবেশের অনুমতি ছিল, তবে অতিরিক্ত লোকজনের কারণে গুহার ভেতরে দূষণ বেড়ে যাওয়ায় এবং দেওয়ালের প্রায় ৬০০টি প্রাচীন চিত্র ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করায় ১৯৬৭ সালে ফ্রান্স সরকার প্রবেশ নিষিদ্ধ করে। গুহাটি প্রায় ৫ দশক ধরে বন্ধ রয়েছে।
২। নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রঃ
নিউইয়র্ক প্রতিবছর লাখ লাখ পর্যটকদের আকর্ষণ করে, এর প্রতিটি দর্শনীয় স্থানই তাদের কাছে জনপ্রিয়। তবে নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড নামক ছোট্ট দ্বীপে প্রবেশ নিষিদ্ধ। বর্তমানে এই দ্বীপটি পরিত্যক্ত এবং ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ সেখানে থাকা সব ঘরবাড়ি যেকোনো সময় ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে।
ইতিহাস অনুসারে, নর্থ ব্রাদার আইল্যান্ড একসময় কোয়ারেন্টাইন হাসপাতালের জন্য পরিচিত ছিল। ১৬১৪ সালে সেখানে একটি সংক্রমণ রোগ ছড়িয়ে পড়ে, যা এ দ্বীপের সাথে মৃত্যু ও অসুস্থতার ইতিহাস জড়িত করে। ১৮৮০ এবং ১৯৪০ সালে আবারও সংক্রমক ব্যাধি ছড়িয়ে পড়লে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের এই দ্বীপে নির্বাসিত করা হয়। যারা মারা গিয়েছিলেন, তাদেরকে এখানকার একটি মর্গে সংরক্ষণ করা হয়েছিল। ১৯৫১ সালে এটি মাদকাসক্তদের পুনর্বাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ১৯৬৩ সালে বিভিন্ন ভৌতিক ও রহস্যময় কারণে দ্বীপটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়, এবং তারপর থেকে জনসাধারণের প্রবেশ সেখানে নিষিদ্ধ।
৩। রাজার সমাধিঃ
চীনের ২১০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের রাজা কিন শি হুয়াং-এর সমাধিতে প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মৃত্যুর পর তার দেহের সঙ্গে ২০০০ সৈন্যের টেরাকোটার মূর্তি কবর দেওয়া হয়েছিল। এই সমাধিটি একটি অত্যন্ত গোপন স্থানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৭৪ সালে স্থানীয় কয়েকজন কৃষক আকস্মিকভাবে এই রহস্যময় টেরাকোটার সমাধির সন্ধান পান। রাজার শেষ চিহ্ন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় এই সমাধিতেও পর্যটকদের প্রবেশ নিষেধ করা হয়েছে। লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, এই সমাধির নিচে পানিতে মৎস্যকন্যারা বাস করেন।
৪। প্যারিসের ক্যাটাকম্বঃ
প্যারিসের ক্যাটাকম্ব একটি অত্যন্ত রহস্যময় স্থান। এখানে হাজার হাজার কঙ্কালের খুলি দিয়ে দেওয়াল তৈরি করা হয়েছে। এক সময় এখানে গণকবর দেওয়া হতো। ক্যাটাকম্বের পাশেই ছিল একটি সমাধিস্থান, যা মৃতদেহের ভারে ধসে পড়লে এই ক্যাটাকম্বের সন্ধান পাওয়া যায়। ‘প্লেস দি গ্রেভে’ দাঙ্গায় নিহতদের এখানে কবর দেওয়া হয়েছিল।
লোকমুখে প্রচলিত আছে যে, সপ্তদশ শতকে ক্যাটাকম্বের ভেতরে নিখোঁজ হয়ে যান এক ব্যক্তি, যার মৃতদেহ ১১ বছর পর পাওয়া যায়। অষ্টাদশ শতকে রাজপরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছিল এখানে। রটনা রয়েছে যে, ক্যাটাকম্বে অতৃপ্ত আত্মারা বাস করে। এই কারণে সরকার ক্যাটাকম্বে প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে।
৫। ভানগড়, রাজস্থানঃ
রাজস্থানের ভানগড়ের নাম অনেকেই শুনে থাকবেন। আলওয়ার জেলার আরাবল্লি পাহাড়ের সরিস্কায় অবস্থিত ভানগড় কেল্লা সপ্তদশ শতাব্দীতে রাজা মাধো সিং নির্মাণ করেন। এক সময় কেল্লাটি রাজপরিবারের সদস্যদের কোলাহলে পূর্ণ ছিল। কিন্তু বর্তমানে এটি একটি ভূতুড়ে স্থান হিসেবে পরিচিত। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে যে, সন্ধ্যার পর কেল্লায় প্রবেশ নিষিদ্ধ। রাতে কেউ এখানে প্রবেশ করলে তার প্রাণ হাতে নিয়ে বাইরে আসা সম্ভব হয় না।
৬। পার্কি বিচঃ
পার্কি বিচ ভূত ও ভৌতিক কাহিনীর জন্য বিখ্যাত। প্রায় ১৫ কিলোমিটার লম্বা, ৩০০-৩৫০ ফুট চওড়া এবং ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ ঝাউবন নিয়ে এই সৈকত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের আধার। কিন্তু ভৌতিক স্থান হিসেবে এটি বিশেষভাবে পরিচিত। সন্ধ্যার পর এখানে অদ্ভুত পদশব্দ, চিৎকার ও ভূতুড়ে আওয়াজ ভেসে আসে, যা যে কারো মনে ভয় জাগাতে পারে। এই আওয়াজগুলো কখনও মনে হয় দূর থেকে আসছে, আবার কখনও মনে হয় যেন পানির নিচ থেকে আসছে। মাঝে মাঝে মনে হয় পাশের বন থেকে শব্দগুলো আসছে, এবং এসব শব্দ কৌতূহলী মানুষকে পানিতে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা জানিয়েছেন, গভীর সাগরে মাছ ধরার সময় তারা এমন অনেক আত্মার দেখা পেয়েছেন, যাদের আগেই মৃত্যু হয়েছে। তাদের মতে, সাগরে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তাদের আত্মা এখনও সেখানে ঘোরাঘুরি করছে।