‘প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে। গতকাল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসন দেখা করেছে নিশ্চয়ই ক্যাম্পাসে পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি করার উদ্দেশ্যে। কিন্তু পুলিশ এখানে কী সহায়তা করবে? তারা কি বহিরাগত অছাত্রদের চেনে? এখানে হল প্রশাসন কাজ না করলে কোন সমাধান সম্ভব নয়। কিন্তু তারা কেউ কাজ করছেন না।’
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারী) সকালে
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডে অভিযুক্ত ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করাসহ পাঁচ দফা দাবিতে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্লাটফর্ম “নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ” এর ব্যানারে ফের প্রশাসনিক ভবন অবরোধকালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম এ মন্তব্য করেছেন।
তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত করতে হবে, যারা অছাত্র রয়েছেন, তাদের সরিয়ে দিতে হবে। প্রশাসন আমাদের বলেছিল, পাঁচ কর্মদিবসে অছাত্রদের বের করে দেবে। কিন্তু তারা সেটা করতে পারেনি বরং তারা ঢাকায় মন্ত্রীদের দ্বারেদ্বারে ঘুরছে।
অবরোধ চলাকালে প্রশাসনিক ভবনে কোন কর্মকর্তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. নূরুল আলমকেও প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। এর আগে গতকাল সোমবারেও প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকে তালা ঝুলিয়ে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন তারা।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবিগুলো হলো —মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্ত করে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করা এবং র্যাগিং-সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; ‘নিপীড়ক শিক্ষক’ মাহমুদুর রহমানের বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করা এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাঁদের তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করা; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িত ব্যক্তিদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
অবরোধকালীন নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায় তার বক্তব্যে বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে একজন বৈধ শিক্ষার্থী থাকার জন্য যথেষ্ট জায়গা পায় না, পড়ালেখার জন্য টেবিল-চেয়ার পায় না। অন্যদিকে কিছু অবৈধ শিক্ষার্থী ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের ছত্রচ্ছায়ায় থেকে তাদের সঙ্গে লেজুড়বৃত্তি করে হলে হলে অবস্থান করছে , যার ফলে বৈধ শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকার থেকে ক্রমাগত বঞ্চিত হচ্ছে।’
অনাকাঙ্ক্ষিত অপরাধ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষুণ্ণ হওয়া সম্মান উদ্ধার ও বিশ্ববিদ্যালয়কে কলঙ্ক মুক্ত করার কোন তৎপরতা উপাচার্যের নেই বলে মন্তব্য করেছেন শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি এবং প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ।
তিনি বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক কীভাবে ছড়িয়ে গেছে, মাদকের ব্যবসা, মাদকসেবন ও চোরাচালানের স্পষ্ট তথ্য র্যাব তাদের সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন ঘটে যাওয়া পাশবিক ঘটনাগুলো অছাত্ররাই ঘটিয়েছে। অথচ প্রশাসন বার বার সেসব অপরাধের বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে, তারা কোনভাবেই এসব ঘটনার দায় এড়াতে পারে না।’
এ বিষয়ে উপাচার্য মো. নূরুল আলমের সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমেনা ইসলাম, প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।
উল্লেখ্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষার্থী হাসিব জামানের সঞ্চালনায় সকাল নয়টা থেকে এগারোটা পর্যন্ত এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়।
রবিউল হাসান
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়