জুলাইয়ের শুরু থেকেই চলতে থাকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ কোটা সংস্কার আন্দোলন। তবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন ক্রমেই সহিংসতায় পরিণত হতে থাকে। সেই আন্দোলনের জেরে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায় এবং পরদিন ১৮ জুলাই রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবাও বন্ধ হয়ে যায়। এরপর প্রায় ৫ দিন টানা ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকার পর ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড এবং ২৮ জুলাই মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হয়।
আমাদের দেশে বর্তমান ব্যাবসায় খাতগুলোর মধ্যে প্রায় সবগুলোই প্রতক্ষ্য বা পরোক্ষ্ভাবে অনলাইন নির্ভর। অনলাইন নির্ভর ব্যবসায়গুলো তাদের সকল কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করে, এমনকি যেসব ব্যবসায় প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে পরিচালিত হয় সেগুলোও নিজেদের প্রচারণার জন্য অনলাই নির্ভর।
তবে বিশেষ করে ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের ব্যবসা সম্পূর্ণ অনলাইন নির্ভর হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এই দুই খাতের কয়েক লাখ উদ্যোক্তা। পাঁচদিন পর সীমিত পরিসরে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও মোবাইল ইন্টারনেট চালু হয় ১১ দিন পর। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এখনও বন্ধ রয়েছে। এ ধরনের ব্যবসার প্রচারণা ফেসবুক নির্ভর হওয়ায় তাই ইন্টারনেট চালু হবার পরও উদ্বেগ কমেনি উদ্যোক্তাদের মধ্যে।
এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তারা ছাড়াও বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফ্রিল্যান্সিংসহ ইন্টারনেট নির্ভর ব্যবসায়গুলো।
ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাতের ব্যবসা অনলাইন নির্ভর হওয়ায় বিপাকে পড়েছে এই দুই খাতের কয়েক লাখ উদ্যোক্তা। বেশকিছু অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মালিকদের সাথে কথা বলে যানা যায় আগে তাদের যে পরিমান অর্ডার আসত এখন তা পড়ে গেছে প্রায় অর্ধেকেরও কম। ফেসবুক বন্ধ থাকায় বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে যে অর্ডারগুলো আসে সেগুলো আসছে না। যে কারণে বিক্রি অর্ধেকে নেমেছে।
(ই-ক্যাব) বা ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের হিসাব অনুযায়ী, ফেসবুকে ৫ লাখেরও বেশি ব্যবসায়ীর নিজস্ব ব্যবসায়িক পেজ রয়েছে। আর ইন্টারনেটের এই অবস্থার ফলে এই খাত প্রায় ১৪০০ কোটির বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।
ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। এই খাত পুরোটা ইন্টারনেটনির্ভর হওয়ায় অনেক কাজ সময়মতো গ্রাহককে বুঝিয়ে দিতে পারেননি এ খাতের উদ্যোক্তারা। এসব ফ্রিল্যান্সারদের গ্রাহক সাধারণত দেশের বাইরের হয়। যে কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।
ফ্রিল্যান্সিং খাতের ক্ষয়ক্ষতির হিসাব করলে দেখা যায়গত কয়েক দিনে ১২০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। আরোও আশঙ্কার কথা এই যে, আগামী তিন মাসে এ ক্ষতির পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এসব অনলাইন নির্ভর ব্যবসায় গুলোর সাথে জড়িত আরেকটি খাত হলো পার্সেল সেবা প্রদানকারীরা। ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাব পড়েছে তাদের ওপরেও। আমাদের দেশের পার্সেল সেবা গুলোর মধ্যে রয়েছে পাঠাও, স্টিডফাস্ট, রেড – এক্স ইত্যাদি। চলমান অবস্থার প্রেক্ষিতে পাঠাও এর মতো কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলো প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা লোকসান করছে।
ফেসবুকের মাধ্যমে দর্শকের আগ্রহ পেয়ে থাকে দেশের ওটিটি প্ল্যাটফর্ম গুলো। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় একদিকে ওটিটি ওয়েবসাইট গুলো তো ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেই , সাথে ফেসবুক বন্ধ থাকায় দর্শকও হারিয়েছে অনেক। বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এই ওটিটি সহ ইন্টারনেট ভিত্তিক বিনোদন প্ল্যাটফর্মগুলো। বিভন্ন সুত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী ক্ষতি বিবেচনায় এই খাতে কয়েক দিনে ৭০-৮০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এছাড়াও ওটিটির একটি বড় মাধ্যম হলো ফেসবুক। ইন্টারনেট সেবার পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম আগের অবস্থায় ফিরে না এলে, ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
সর্বোপররি আলোচনা এবং বিশেজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় দেশের তৃণমূল পর্যায়ের এফ-কমার্স ও ই-কমার্স ব্যবসায়ীরা পথে বসেছে। ফ্রিল্যান্সাররা বড় ভুল যেটি করেছেন, সেটি হলো ভিপিএন ব্যবহার করে পেমেন্ট করেছেন। যে কারণে অনেকে ব্যান হয়ে গেছেন। আমাদের অনলাইন নির্ভর উদ্যোক্তারা দীর্ঘমেয়াদি ধাক্কা খেয়েছে। এতো ক্ষতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানো কষ্টকর হবে এবং সেটি হবে সময় সাপেক্ষ।