কোটা সংস্কার আন্দোলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের। এক বিবৃতিতে তিনি দাবি করেছেন, পুলিশের বন্দুকের মুখে অন্য সমন্বয়কদের জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহার করার ঘোষণা আদায় করা হয়েছিল। এর প্রতিবাদে সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।
রবিবার মধ্যরাতে এক বিবৃতিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে ও ছাত্রলীগের আক্রমণে নিহত শত শত শহীদের আত্মত্যাগ তিরস্কার করে ডিবি কার্যালয়ে বন্দুকের নলের মুখে জিম্মি করে সমন্বয়কদের মাধ্যমে জোরপূর্বক যে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি আদায় করেছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের দাবি আদায়ে আমরা অবিচল ছিলাম, রয়েছি এবং থাকব।’ তার বিবৃতি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এর আগে রবিবার ঢাকা মহানগর পুলিশে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) হেফাজতে থেকেই সব ধরনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম, সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মো. আবু বাকের, আসিফ মাহমুদ ও নুসরাত তাবাসসুম। নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলে তাদের তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। ডিবি কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তারা বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত-নিহত হয়েছেন। এছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ বিভিন্ন সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এসব অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাই।’
এসময় তারা আরও বলেন, ‘আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার, যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই।’ পরে সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে নাহিদ ইসলাম সব কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেন, ‘বিগত কয়েকদিন যাবৎ গণহত্যা, গণগ্রেফতারের পর সরকার এখন এক নতুন নাটকের সৃষ্টি করেছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের তুলে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জিম্মি করে অস্ত্রের মুখে স্ক্রিপ্টেড বিবৃতি দিয়ে, ছাত্রসমাজের দাবিসমূহের প্রতি সরকার চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করেছে। শুধু তাই নয়, সারাদেশে রাষ্ট্রীয় বাহিনী ও ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত শহীদদের পরিবারকে হুমকি-ধমকি ও ভয়ভীতি দেখিয়ে, আর থেকে মিথ্যা জবানবন্দি নেওয়া ও সমস্ত দায়পর চাপিয়ে শহীদের রক্তের সাথে তামাশা করেছে।’
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘প্রিয় দেশবাসী, আপনারা জানেন, দেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সরকার সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতনের স্টিমরোলার চালিয়ে যাচ্ছে। ব্যাপক হত্যাযজ্ঞের পর সরকার সারাদেশে রেইড করে গণগ্রেফতার করেছে। হাজার হাজার মামলা ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বর্বরোচিত হামলা চালানো হয়েছে। এমনকি স্কুল ও কলেজের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উপর ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত ও শহীদ করা হয়েছে। কোমলমতি শিশু সামিরকে হেলিকপ্টার থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। আমরা কঠোর ভাষায় বলতে চাই, আমাদের দাবী আদায় না হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ছাত্র আন্দোলন চলবে।’
এই বিবৃতির মাধ্যমে সোমবার সারাদেশে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ কর্মসূচি ও প্রতিবাদ সমাবেশের ডাক দিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকেও একই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
কর্মসূচি চলাকালে রাজধানীসহ সারা দেশে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও সরকর সমর্থকদের সংঘর্ষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ক্লাস পরীক্ষা স্থগিত করে হল খালি করার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ। অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ করে সরকার। গত ১৮ জুলাই আন্দোলনকারীরা সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় আগুন দেয়। ব্যাপক ভাঙচুর হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ১৯ জুলাই রাতে কারফিউ জারি করে সরকার। বেসামরিক প্রশানসকে সহায়তায় মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী।