বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (ববি) পুলিশ ব্রিফিংয়ের সামনেই সাংবাদিককে হেনস্তা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথাকথিত ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাত। এসময় সাংবাদিককে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন তিনি। ব্রিফিংয়ে মাসুদ রানা ওসি মুকুলের ভিডিও বক্তব্য ধারণ করতে গেলে আরাফাত তাকে জোরপূর্বক টেনে হিঁচড়ে নিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। হেনস্তার একটি ভিডিও এই প্রতিবেদকের কাছে এসেছে।
বৃহস্পতিবার (১লা আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইনগেটে পুলিশ ব্রিফিংয়ে বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ.আর. মুকুলের ভিডিও বক্তব্য সংগ্রহের সময় সাংবাদিক মাসুদকে পিছন থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন। এসময় সাংবাদিক মাসুদকে তুলে নেওয়ার চেষ্টাও করেন ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাত। টেনে হিঁচড়ে নেওয়ার সময় মাসুদ হাতে আঘাত এবং কোমরে আঘাত পান। এসময় তাঁর হাত দিয়ে রক্ত বের হয়। ওসি মুকুলের কাছে চিৎকার করে সহায়তা চাইলে তিনি সাংবাদিক মাসুদকে উদ্ধার করেন এবং স্থান ত্যাগ করতে সহযোগিতা করেন।
মাসুদ রানা ঢাকা টাইমসের বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য। মাসুদ রানা বলেন, আমি পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম পুলিশ ব্রিফিংয়ে ওসির একটা বক্তব্যের ভিডিও নিচ্ছিলাম। ঠিক ঐ সময় ছাত্রলীগের নেতা দাবি করা এ কে আরাফাত আমাকে পিছন থেকে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে শারীরিকভাবে হেনস্তা করেন এবং তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন। এসময় হাতে খামছি দিয়ে ধরার ফলে হাতে আঘাত পাই ও রক্ত বের হয়। তাৎক্ষণিক ঐখানে উপস্থিত পুলিশের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ঐ সময় পুলিশ তার হাত থেকে ছাড়িয়ে আমাকে ঐ স্থান ত্যাগ করতে সহযোগিতা করেন। এর আগে গত ২৯জুলাই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের ওপরে ছাত্রলীগের হামলার ভিডিও ধারন করতে গেলে ছাত্রলীগ কর্মী আরাফাত আমাকে দেখে নেয়ার হুমকি দেয়। তারই জের ধরে আজকে আমাকে শারীরিকভাবে হেনস্তা করে তুলে নেয়ার চেষ্টা করেন বলে জানান তিনি। মাসুদ বলেন, আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।
সাংবাদিক হেনস্তা ও তুলে নেয়ার চেষ্টা বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে অভিযুক্ত আবুল খায়ের আরাফাত বলেন, আমি কোন সাংবাদিক লাঞ্চিত করিনি। ঐ ছেলেটা আমার ক্যাম্পাসের ছোট ভাই তাই ডেকে কথা বলতে চাচ্ছিলাম। কথা বলতে চাইলে তাকে টেনে হিঁচড়ে কেন নিয়ে আসছিলেন, এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে পারেননি আরাফাত।
বরিশাল বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে সংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় পাশ থেকে একজনকে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো, আমি দেখে ছেলেটিকে নিরাপদ স্থানে চলে যেতে সহযোগিতা করি। ছেলেটি তখন আমাকে বলে সে সাংবাদিক। ছেলেটাকে কে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলো তাকে চেনেন না বলে জানান ওসি মুকুল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি ইতিমধ্যে আমার নজরে এসেছে যেহেতু এটা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সামনে ঘটেছে তারা বিষয়টি দেখবেন আশাকরি। এছাড়াও, এই ব্যাপারে কোন অভিযোগ পেলে তার যথাযথ ব্যবস্থা এবয়ল দোষীর উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করবেন বলে জানান উপাচার্য।
উল্লেখ্য, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। পরিচয়ধারী ছাত্রলীগ কর্মী আবুল খায়ের আরাফাতের বিরুদ্ধে ২০২১ সালে ট্রেইনি কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়ার লিখিত পরীক্ষায় প্রক্সি দিতে গিয়ে পুলিশের কাছে আটক, হত্যার ভয় দেখিয়ে মোবাইল ও নগদ অর্থ ছিনতাই মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের একটি মিটিংয়ে হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।