বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের নিয়োগের ৫ মাসেও হয়নি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা। আইন অনুযায়ী প্রতি তিন মাসে কমপক্ষে একটি সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা হওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের ২৯ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৪ তম সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এর মাত্র দুইমাস পর মাত্র ৮দিনের ব্যবধানে ১১ আগস্ট ও ১৯ আগস্ট দুটি ( ৮৫ তম ও ৮৬ তম) বিশেষ (জরুরী) সিন্ডিকেট সভা করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. বদরুজ্জামান ভূঁইয়া। সে হিসেবে ৮ মাস পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা হয়নি।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ববিতে প্রথম নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন। নিয়োগের এক মাস যেতে না যেতেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ( বেরোবি ) বিতর্কিত সাবেক উপাচার্য নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য করে বিতর্কে জড়ান তিনি।
তবে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ক্ষোভের মুখে কলিমুল্লাহকে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদ থেকে সরাতে বাধ্য হন উপাচার্য। কিন্তু সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় কাগজে-কলমে একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য পদে এখনো বহাল তবিয়তে কলিমুল্লাহ।
সূত্রটি আরো জানায়, সিন্ডিকেটের সদস্য পদ থেকে কাউকে বাদ দিতে হলেও একটি সিন্ডিকেট সভা ডাকা দরকার। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সিন্ডিকেট সভা ডাকছেন না উপাচার্য। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের অংশীজনদের বিভিন্ন ইস্যুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা ও সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা জানান, গত ৫ই আগস্ট ছাত্র জনতার গনঅভ্যুত্থানের মুখে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর ববির তিনটি হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তনের দাবি তোলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
এ বিষয়ে গত বছরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রতিনিধি নিয়ে একটি কমিটি করে দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু কমিটির কার্যক্রমের দীর্ঘসূত্রতার কারণে শিক্ষার্থীরাই গ্রহনযোগ্যতার ভিত্তিতে দুটি হল ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের নাম পরিবর্তন করে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। তবে সিন্ডিকেট সভা না হওয়ায় এখনো ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামেই চলছে হলগুলোর দাপ্তরিক কার্যক্রম। তাই বিষয়টি নিয়ে দিন দিন ক্ষোভে ফুঁসছেন তারা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাকিব আহমেদ বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলের অনেক আইন বাতিল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় সংস্কারের কথা কেবল মৌখিকভাবেই বলেছেন উপাচার্য। সিন্ডিকেট ডেকে তা আইনের মাধ্যমে এখনো বাস্তবায়ন করা হয়নি। আমরা বলেছিলাম সিন্ডিকেট সভা থেকে ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসরদের সরাতে কিন্তু বর্তমানে উপাচার্য আমাদের কোনো কথাই শুনছেন না। এর আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
ববি সিন্ডিকেট সভার সদস্য মোস্তাকিম রহমান বলেন, নিয়োগের পর উপাচার্য পদে পদে ব্যর্থ হয়েছেন। বিভিন্ন বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন। সেখানে তার একটা অদূরদর্শিতার পরিচয় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার পেয়েছে। এখন তিনি সিন্ডিকেটে নিজের একক আধিপত্যের চেষ্টা করছেন। কিন্তু কোনো উপায় খুঁজে না পেয়েই শুধু শুধু নিয়ম ভেঙ্গে সিন্ডিকেট সভাকে দীর্ঘায়িত করছেন।
এ বিষয়ে ববি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম রব্বানি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী তিন মাসে সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। আমি মনে করি, খুবই দ্রুতই সিন্ডিকেটের সাধারণ সভা হওয়া প্রয়োজন। আমরা এর দায় এড়াতে পারি না।
এ বিষয়ে ববি উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিন বলেন, আমরা নতুন সিন্ডিকেট মেম্বার পেয়েছি গত সপ্তাহে। সামনে দ্রুতই সভা হবে।