এসেছে বসন্ত, বইছে ফাগুনের হাওয়া। বসন্তের আগমনে গাইছে কোকিল, ভ্রমর করছে খেলা। গাছে গাছে লেগেছে পলাশ আর শিমুলের মেলা। ফাগুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। ঋতুরাজকে স্বাগত জানাতেই প্রকৃতির আজ এত বর্ণিল সাজ। বসন্তের এই আগমনে প্রকৃতির সঙ্গে তরুণ হৃদয়েও লেগেছে দোলা। প্রতিবারের মতো এবারো ঋতুরাজ বসন্তকে বরণ করে নিতে নতুন সাজে সেজেছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা সবুজের স্বর্গখ্যাত বিদ্যাপীঠ জাহাঙ্গীরগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) ক্যাম্পাস। ক্যাম্পাসের আনাচে-কানাচে ফুটে থাকা মুহুমুহু ফুলের ঘ্রাণ যেন বসন্তকে নতুন রুপ দিয়েছে। জাবিতে মহাসমারোহ ও বহু-বর্ণিল সাজে বসন্ত বরণ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। বসন্তের এ দিনে তরুণীরা হলুদ আর বাসন্তী রঙের শাড়ি ও তরুণরা বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি পরে সামিল হয়েছে বসন্ত বরণ উৎসবে।
‘এতো যে রঙ, এতো যে আলো হাওয়ায় হাওয়ায়, বসন্ত তার আবির মেখে নাম লিখে যায়’ স্লোগানকে ধারণ করে বুধবার সকাল ১০ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার সংলগ্ন মহুয়াতলায় বাংলা বিভাগের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হয় এবারের বসন্ত বরণ উৎসব। বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিকী অনুষদের ডীন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হকের উদ্বোধনে এ অনুষ্ঠান শুরু হয়। অনুষ্ঠানে বিভাগের প্রযোজনায় সকাল ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত বিভাগের শিক্ষক – শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত অংশগ্রহণে গান, নাচ ও আবৃত্তি পরিবেশিত হয়। এরপর সকাল সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক – শিক্ষার্থীরা মিলে র্যালি বের করেন। সন্ধ্যা ৭টায় কবি জসীমউদ্দিনের কাব্যগ্রন্থ ‘সোজন বাদিয়ার ঘাট’ এর নাট্যপ্রযোজনা ‘সেলিম আল দীন’ মুক্তমঞ্চে মঞ্চায়িত হবে। অন্যদিকে ‘মাধবীবিতানে বায়ু গন্ধে বিভোল’ স্লোগানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম ছায়ামঞ্চে নবীনবরণ ও বসন্তযাপন আয়োজন করেছে বঙ্গবন্ধু তূলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইনস্টিটিউট।
বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম তালুকদার বলেন, ‘শীতের রিক্ততার পরে বসন্তের মাধ্যমে প্রকৃতিতে যেমন আনন্দের জোয়ার লাগে ঠিক তেমনি বসন্তের মাধ্যমে আমাদের মনের আনন্দ দৃশ্যমান হয়। এই আনন্দ, উৎসবমুখর পরিবেশ সারাবছর ধরে বজায় রাখার উদ্দেশ্যেই আমাদের এ আয়োজন।’
বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আহসান ইমাম বলেন, বসন্ত মানেই নতুন কিছু, বসন্ত এলে প্রকৃতি যেভাবে তার জড়া জীর্ণতা ঝেড়ে ফেলে নতুন উদ্যমে নতুন রুপ ধারণ করে। আমরাও সেভাবে নতুন কঁড়ি প্রস্ফুটিত হবার মতো নতুন উদ্যমে জেগে উঠি। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে, বিদ্যায়তনগুলোতে প্রকৃতিকে ধারণের এমন চর্চা অব্যাহত থাকুক। আমি আমার সন্তানকে নিয়ে এ উৎসব উদযাপনে এসেছি, খুবই ভালো লাগছে।’
বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী ইমরান হোসাইন হিমু বলেন ‘বসন্ত আমাদেরকে উল্লসিত ও উৎফুল্ল করে। বসন্তের মধ্যদিয়ে আমরা যেনো জীবনকে নতুনভাবে উপলব্ধি করি। আপনারা সবাই জানেন ফুল ফোঁটে বনে-বাগানে তার শিহরণ লাগে আমাদের মনে। বসন্ত এমনই এক সুন্দর ও সৌন্দর্যমণ্ডিত ঋতু।’
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী মেহরিন সরকার পিয়া বলেন, ‘বসন্ত মানেই নতুন কিছু। বসন্ত মানেই পুরনোকে ঝেড়ে ফেলা। বসন্ত নিয়ে এমন আয়োজন অব্যাহত থাকুক।’
বঙ্গবন্ধু তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থী সোহানা আক্তার বলেন, ‘বসন্ত আমাদের মনকে রঙিন করে। বসন্ত আমাদেরকে বেদনা ভুলে গিয়ে নতুন করে বাঁচতে শেখায়। বসন্তের এ হাওয়া প্রকমতি থেকে আমাদের মনের গহীনেও ছড়িয়ে পড়ুক।’
রবিউল হাসান