শীতের শেষে রুক্ষ, শুস্ক বিষণ্ণ প্রকৃতির বুকে প্রাণের সঞ্চার এনেছে ঋতুরাজ বসন্ত। নিষ্প্রাণ প্রকৃতির বুকে কোকিলের কুহু কুহু ডাক যেন বসন্তের আগমনী বার্তা। তাই তো কোকিলকে বলা হয় বসন্তের দূত। ফাগুনের উষ্ণ হাওয়ায় কোকিলের ডাক বিরহী বেদনাকে আরো মধুর করে তোলে। আহ্বান জানায় বসন্তকে।
জনপ্রিয় গানের দুটি লাইন –
“কুহু কুহু শোনা যায় কোকিলের কুহুতান
বসন্ত এসে গেছে, বসন্ত এসে গেছে।”
শীতের জানান দেয় যেমন বাহারি শাক-সবজি ও পিঠাপুলি তেমনি বাহারি ফুলের সমারোহ জানান দেয় বসন্ত এসে গেছে। শীতের পাতাঝরা গাছ গুলায় নতুন পাতা গজায় বসন্তে। ফাল্গুনের হাত ধরেই ঋতুরাজ বসন্তের আগমন।
ফাগুনের মাতাল হাওয়া লাগে বাংলার নিস্বর্গ প্রকৃতিতে। এ প্রকৃতি রবীন্দ্রনাথ ফুটিয়ে তুলেছে তাঁর গানের মধ্য দিয়ে –
“ফাগুন হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান
তোমার হাওয়ায় হাওয়ায় করেছি যে দান,
আমার আপনহারা প্রাণ,
আমার বাঁধন ছেঁড়া প্রাণ ”
ফাগুনের আগুন লাগে পলাশ, শিমুল আর কৃষ্ণচূড়ায়। ফুল দিয়ে আপন সৌন্দর্যে সাজে প্রকৃতি। যেন ফ্যাকাশে প্রকৃতিতে রঙের মেলা। শীতের চাদর সরিয়ে প্রকৃতি নিজেকে রাঙিয়ে তুলে।
ব্যতিক্রম নয় নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়েও! পলাশ, কৃষ্ণচূড়া, গাঁদা, রক্ত গাঁদা, গোলাপ, জবা, ডালিায়, মোরগ ঝুঁটি, বাগানবিলাস, স্যালভিয়া, ক্যালেন্ডুলা, ডায়ানথাস, পিটুনিয়াসহ নানান রঙের ফুলের দেখা মিলে। লাল-কমলা-হলুদ রঙের ফুলের শেষ নেই, এসব ফুলে রঙিন হয়ে ওঠেছে ক্যাম্পাস। যেন প্রকৃতিতে রঙের আগুন লেগেছে। এসকল ফুলের সুবাস সেইসাথে আমের মুকুলের ম-ম ঘ্রানে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি হয়ে ওঠে চঞ্চল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রবিন্দু নজরুল ভাস্কর্য এবং মুজিব ভাস্কর্যের পদদেশ ভরে উঠেছে নানান ফুলের সমারোহে। দৃষ্টিনন্দন এ স্থাপনাগুলোতে ফুলের সমারোহ দেখে প্রকৃতি প্রেমীদের যেন চোখ ফেরানো দায়! যুগে যুগে বসন্ত প্রভাবিত করেছে কবি মনকেও। নিজের অজান্তেই মন গেয়ে ওঠে, ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে, বহে কিবা মৃদু বায়…’।
এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন জায়গায় প্রশাসনের উদ্যোগে লাগানো হয়েছে নানা প্রজাতির ফুলের গাছ, তৈরী করা হয়েছে বাগান। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ছাড়াও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রঙিন এ ক্যাম্পাস। সকলেই বসন্তকে বরণ করে নিয়ে প্রকৃতির সাথে নিজেকেও রাঙিয়ে ক্যামেরাবন্দি করছে নিজে কিংবা পরিবার-পরিজনদের সাথে।
একজন দর্শনার্থী মো: শফিকুল ইসলাম তার অনুভূতি ব্যক্ত করে জানান ” কর্মব্যস্ততায় সাধারণত এ ক্যাম্পাসে আসা হয় না। তবে বসন্তের ছোঁয়ায় ক্যাম্পাসের প্রকৃতি নতুন রূপ নিয়েছে, যা খুবই মনোমুগ্ধকর তাই ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা। ”
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ” জলবায়ুগত কারণে এখন আর সব ঋতুর দেখা মিলে না। তবে এখনও রঙিন প্রকৃতি আমাদের জানান দেয় বসন্তের। আর এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি সেজেছে আপন মহিমায়, বেড়েছে প্রাণচঞ্চলতা।
তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেক উন্নয়ন প্রকল্প চলমান। এগুলোর বাস্তবায়ন সম্পন্ন হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৌন্দর্য আরো বহু গুনে বৃদ্ধি পাবে। ”
রিভা সুলতানা,
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।