জান্নাতুল ফেরদৌসি, বিইউপি প্রতিনিধিঃ
“আকাশের মত বাঁধাহীন,
মোরা মরু-সঞ্চার বেদুঈন,
বন্ধনহীন জন্ম-স্বাধীন,
চিত্তমুক্ত শতদল।।”- কাজী নজরুল ইসলাম এর এই কবিতার প্রতিপাদ্যে বিইউপিতে অনুষ্ঠিত হলো বর্ণিল নজরুল জয়ন্তি।
বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালস (বিইউপি)-এর কালচারাল ফোরাম ক্লাবের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে ‘নজরুল জয়ন্তী’ শীর্ষক এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কবির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন এবং তাঁর অমর সাহিত্যকীর্তিকে স্মরণ করতেই এই আয়োজনটি সম্পন্ন হয়।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও বিইউপির মাননীয় উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার মোকাদ্দেম হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে সম্মানিত রেজিস্ট্রার মহোদয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের সম্মানিত ডিনবৃন্দ এবং বিভাগীয় চেয়ারম্যানগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মারজানা মারিয়া এবং ব্যবস্থাপনা বিভাগের মুস্তাক শাহরিয়ারের প্রাণবন্ত উপস্থাপনায় পুরো অনুষ্ঠানটি প্রাণচাঞ্চল্যে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে। বক্তৃতা পর্বে প্রধান অতিথি ও অন্যান্য বক্তারা নজরুলের বর্ণাঢ্য জীবন, সাহসিকতা, মানবিক মূল্যবোধ এবং শিল্প-সাহিত্যে তাঁর অসামান্য অবদানের কথা গভীরভাবে স্মরণ করেন।
বক্তারা নজরুলের অসাম্প্রদায়িক চিন্তাধারা, সাম্যবাদী দর্শন এবং বিদ্রোহী চেতনার গুরুত্ব আলোকপাত করেন। তাঁরা বিইউপির শিক্ষার্থীসহ তরুণ প্রজন্মকে কবির আদর্শকে জীবনের পথনির্দেশক হিসেবে গ্রহণের আহ্বান জানান। বক্তারা উল্লেখ করেন, নজরুলের মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি, ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়াস এবং শোষণবিরোধী সংগ্রাম আজও সমানভাবে প্রাসঙ্গিক। তাঁর আদর্শ ধারণ করে তরুণরা যেন একটি উন্নত, প্রগতিশীল ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে—এই প্রত্যাশাই ব্যক্ত করা হয়।
তাছাড়াও মাননীয় উপ-উপচার্য মহোদয় তাঁর বক্তব্যের এক পর্যায়ে তাঁর ছাত্রজীবনে বিদ্রোহী কবির সাথে সাক্ষাতের স্মৃতিচারণও করেন।
অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক পর্বটি ছিল কবির সৃষ্টিকর্মে সমৃদ্ধ ও মন্ত্রমুগ্ধকর। অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা নজরুলের কালজয়ী রচনাবলির মাধ্যমে শিল্পের মাধুর্য ছড়িয়ে দেন। পরিবেশনায় স্থান পায় ‘পত্রপাঠ’ সহ নজরুলের হৃদয়স্পর্শী কবিতার নান্দনিক পাঠ, ‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম’, ‘বুলবুলি’ এর মতো চিরসবুজ গান।
এই পরিবেশনা পুরো অনুষ্ঠানকে করে তোলে সৃজনশীলতায় ভরপুর।
সমাপনী পর্বে বক্তারা বিইউপি কালচারাল ফোরামের নিবেদিতপ্রাণ সদস্যদের এই সুচারু, অর্থবহ ও শিল্পসম্মত আয়োজনের জন্য আন্তরিক অভিনন্দন ও কৃতজ্ঞতা জানান। তাঁরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, এমন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের ধারাবাহিকতায় বিইউপি অচিরেই হয়ে উঠবে এক সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র—যেখানে জ্ঞান, মনন ও সৃজনশীলতার চর্চা চলবে সমান্তরালে। সবশেষে আলোকচিত্র গ্রহণের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটির সমাপ্ত ঘটে।