জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে ক্যাম্পাস। অভিযুক্ত ফিল্ম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠর শাস্তির দাবিতে আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী,কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শুক্রবার (১১ এপ্রিল) রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম গেট সংলগ্ন এলাকায়। অভিযোগ রয়েছে, ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠ তার ব্যক্তিগত ফেসবুক প্রোফাইলে মহানবী (সা.) সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন এবং নিজেকে ‘গড’ হিসেবে দাবি করেন। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। রাতেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে ক্যাম্পাসজুড়ে, এমনকি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধরের ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা গেছে।
রোববার, ১৩ এপ্রিল ২০২৫, দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়। মিছিলটি কলা ভবন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া প্রদক্ষিণ করে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গিয়ে শেষ হয়।
বিক্ষোভ-পরবর্তী সংক্ষিপ্ত সমাবেশে পপুলেশন সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল মাহমুদ বলেন, “কিছু কুলাঙ্গার আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি করেছে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। একইসঙ্গে যারা এই কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষক, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
এ বিষয়ে লোক প্রশাসন ও সরকার পরিচালনাবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক জনাব আজিজুর রহমান (আবির) বলেন, “একটি গোষ্ঠী আমাদের নবীকে নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে কটূক্তি চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা কোনো ধর্ম, বর্ণ বা সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নই। প্রত্যেকে তার নিজ ধর্ম পালন করুক—তাতে আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু তারা কেন আমাদের প্রাণের নবীকে নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করবে?”
পরে অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে দ্রুত বিচার দাবি করে উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলমের কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। স্মারকলিপিতে সাত দিনের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এসময় উপাচার্য শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে বলেন, “আমরা আজ একটি প্রাথমিক সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”
উল্লেখ্য, ইনান হাসনাইন শ্রেষ্ঠ নামের এক শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নবী করিম (সা.)-কে নিয়ে কটূক্তি, নিজেকে ‘গড’ দাবি করা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ফিল্ম জোন’কে ‘মক্কা শরীফ’ বলা, তার বন্ধু সারোয়ার জাহান কর্তৃক জুনিয়রদের সিজদা করানো, জোর করে মাদক সেবনে বাধ্য করাসহ একাধিক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
তবে এসব অভিযোগ ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে দাবি করেছে অভিযুক্ত হাসনাইন শ্রেষ্ঠ, সারোয়ার ও তাদের সহযোগীরা। তাদের ভাষ্য, “সোশাল মিডিয়ার কিছু পেইজে ধর্মীয় অনুভূতি আঘাতের ভুয়া অভিযোগ ছড়িয়ে আমাদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের উত্তেজিত করা হয়েছে।”