সাপ সাধারণত বিষাক্ত প্রাণী হিসেবে পরিচিত, কিন্তু সব সাপই ভয়ংকর বা বিষাক্ত নয়। অধিকাংশ সাপ আত্মরক্ষার জন্য আক্রমণ করে। পৃথিবীতে প্রায় ৬০০-এরও বেশি বিষাক্ত সাপের প্রজাতি রয়েছে, এবং এর মধ্যে ২০০ প্রজাতির সাপ মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে, যেমনটি জানিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। কিছু সাপের কামড়ে শরীরের মাংস পচে যায়, আবার কিছু সাপ পুরোপুরি মানুষকেও গিলে ফেলতে পারে। চলুন, জানি পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর ১০টি সাপের পরিচিতি ও তাদের বাসস্থল সম্পর্কে।
১। হাইড্রোফিলিস বেলচেরিঃ
অনেকে ইনল্যান্ড তাইপানকে পৃথিবীর সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ হিসেবে মনে করলেও, আসলে বেলচেরি সাপই সবচেয়ে বিষাক্ত। এটি ইনল্যান্ড তাইপানের চেয়ে প্রায় ১০০ গুণ বেশি বিষাক্ত। সমুদ্রের এই সাপটির দৈর্ঘ্য ০.৫ থেকে ১ মিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং এর মাথা শরীরের তুলনায় ছোট। এর পেছনে মাছের মতো লেজ রয়েছে যা সাঁতার কাটতে সহায়ক। এ সাপটি একবার শ্বাস নিয়ে ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা পানির নিচে থাকতে পারে। যদিও এটি সাধারণত কামড়ায় না, তবে বিরক্ত করলে কামড় দিতে পারে। কিছু মিলিগ্রাম বেলচেরির বিষ ১০০০ জন মানুষের মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট।
২। তাইপান সর্প পরিবারঃ
ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলোর মধ্যে তাইপান সবচেয়ে বেশি বিষাক্ত। এর মধ্যে ইনল্যান্ড তাইপান সবচেয়ে ভয়ংকর। এর কামড়ে মানুষের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা এক ঘণ্টারও কম। ইনল্যান্ড তাইপান একটি কামড়ে প্রায় ১১০ মিলিগ্রাম বিষ নিক্ষেপ করতে পারে। কয়েক মিলিগ্রাম বিষই ১০০ জন মানুষ বা ২.৫ লাখ ইঁদুর মারার জন্য যথেষ্ট। এই সাপগুলি ১.৮ থেকে ৩.৭ মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। সাধারণভাবে শান্ত প্রকৃতির হলেও বিরক্ত হলে এটি কয়েকবার কামড় দিতে পারে।
৩। ক্রেইটঃ
তাইপানের পর ক্রেইট সাপ ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিষাক্ত। এটি এশিয়ায় পাওয়া যায় এবং সাধারণত ৯০ সেন্টিমিটার থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়। ক্রেইট সাপ সাধারণ কোবরা থেকে প্রায় ১৫ গুণ বেশি বিষাক্ত। দিনে নিষ্ক্রিয় থাকলেও রাতে সক্রিয় থাকে এবং মানুষের শ্লিপিং ব্যাগ, বুট বা তাবুর নিচে লুকানো থাকতে পছন্দ করে। ইন্ডিয়ান ক্রেইট ভারতের সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ।
৪। ফিলিপাইন কোবরাঃ
এটি ভূমিতে বসবাসকারী পৃথিবীর তৃতীয় সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এর দৈর্ঘ্য সাধারণত ১ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ক্রেইটের পরেই এটি বিষাক্ত। ফিলিপাইন কোবরা সাপুড়েদের সাপের নাচের সময় ব্যবহার করা হয়। রেগে গেলে এটি মাথার দুই পাশে হুড দেখায়।
৫। ইন্ডিয়ান কিং কোবরাঃ
ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলোর মধ্যে এটি চতুর্থ সবচেয়ে বিষাক্ত। এটি সাধারণত ৩.৫ থেকে ৫.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। ইন্ডিয়ান কিং কোবরা সাপের কামড় সাধারণত অন্য বিষাক্ত সাপগুলোর তুলনায় বেশি ভয়ঙ্কর। স্ত্রী কিং কোবরা ডিমের চারপাশে বাসা বাঁধে এবং বাসার কাছাকাছি কিছু এলে অত্যন্ত আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে।
৬। রাসেল ভাইপারঃ
ভয়ংকর দেখতে এই সাপটি পৃথিবীর বিষাক্ত সাপগুলোর মধ্যে পঞ্চম। এটি অত্যন্ত রাগী এবং শিকারকে অত্যন্ত দ্রুত কামড়ায়, পালানোর সুযোগ না দিয়ে। এটি সাধারণত ১ থেকে ১.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে এবং বিভিন্ন প্রজাতি রয়েছে যারা খামারবাড়ি থেকে গভীর জঙ্গলে বাস করে।
৭। ব্ল্যাক মাম্বাঃ
আফ্রিকার আতঙ্ক ব্ল্যাক মাম্বা সাপটি পৃথিবীর ষষ্ঠ সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এটি দ্রুত গতির এবং আক্রমণাত্মক। ঘণ্টায় প্রায় ১৬ থেকে ১৯ কিমি দ্রুত চলতে পারে এবং সাধারণ মানুষ এদের থেকে যথেষ্ট দূরে থাকে। এটি প্রায় ৪.৩ মিটার লম্বা হতে পারে।
৮। হলুদ চোয়াল বিশিষ্ট টম্মিগফঃ
স্থানীয়ভাবে ফার-ডি-ল্যান্স নামে পরিচিত এই সাপটি পৃথিবীর সপ্তম সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এটি খুব রাগী এবং সামান্য উত্তেজিত হলে প্রচণ্ড কামড় দেয়। কামড়ে মানুষের শরীরে পচন দেখা দেয়। সাধারণত কৃষি জমি ও খামারবাড়িতে এদের দেখা যায় এবং গড় দৈর্ঘ্য ১.৪ থেকে ২.৪ মিটার পর্যন্ত।
৯। মাল্টি-ব্র্যান্ডেড ক্রেইটঃ
ভূমিতে বসবাসকারী সাপগুলোর মধ্যে এটি অষ্টম। সাধারণ ক্রেইটের মতো এটি রাতের বেলা খুব সক্রিয় থাকে এবং জলাভূমিতে মাছ, ব্যাঙ বা অন্যান্য সাপের সন্ধানে বের হয়। গড় দৈর্ঘ্য ১.৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে এবং চীন ও ফিজিতে বেশি দেখা যায়।
১০। টাইগার স্নেকঃ
অস্ট্রেলিয়ার এই সাপটি পৃথিবীর নবম সবচেয়ে বিষাক্ত সাপ। এটি প্রচুর বিষ তৈরি করতে পারে এবং শুষ্ক অঞ্চল, তৃণভূমি, জলাভূমি, মানববসতি সব জায়গায় দেখা যায়। সাধারণত ১.২ থেকে ১.৮ মিটার লম্বা হয়ে থাকে।
উল্লেখ্য, সাপ বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিভাগে কর্ডাটা পর্বের, মেরুদণ্ডী উপপর্বের, সরোপ্সিডা শ্রেণির স্কোয়ামান্টা বর্গের, সার্পেন্টেস উপবর্গের সদস্য। সাপের ইতিহাস প্রায় ১৫ কোটি বছরের, এবং গিরগিট থেকে সাপের জন্ম হয়েছে বলে মনে করা হয়। সাপের ১৫টি পরিবার, ৪৫৬টি গ্রোফ ও ২,৯০০টিরও বেশি প্রজাতি রয়েছে; যার মধ্যে অনেক প্রজাতি বিষহীন এবং বিষাক্ত সাপগুলো সাধারণত আত্মরক্ষার জন্য বিষ প্রয়োগ করে।