বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুটেক্স) ছেলেদের তিনটি আবাসিক হলে প্রায় এক হাজারের অধিক শিক্ষার্থী থাকেন। আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে শারীরিক সুস্থতা ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় একটি মৌলিক অবকাঠামো জিমনেশিয়ামের (ব্যায়ামাগার) অভাববোধ করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।
সাধারণত বেশিরভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় জিমনেশিয়াম থাকে এবং হল ভিত্তিক জিমনেশিয়াম থাকে, কিন্তু বর্তমানে বুটেক্সের আবাসিক হলগুলোতে বা কেন্দ্রীয়ভাবে কোন জিমনেসিয়াম নেই। ফলে শরীরচর্চার জন্য শিক্ষার্থীদের বাইরের জিমনেসিয়ামে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করতে হয়।
বুটেক্সের জি.এম.এ.জি ওসমানী হলে জিমরুমের জন্য জায়গা বরাদ্দ থাকলেও সেটি গত কয়েকবছর ধরে গণরুম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ২০১০ হতে ২০১৩ সাল পর্যন্ত ওসমানী হলের জিমরুম সচল থাকলেও বিভিন্ন শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল তারা জিমরুমের যন্ত্রপাতি নিজেদের রুমে নিয়ে যেত এবং তা ফেরত দিত না। ফলে তিনবছরের মাথায় বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হয় ওসমানী হলের জিমরুম।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসমানী হলের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাসির উদ্দীন জানান, জিমরুমের জন্য হলের নির্দিষ্ট স্থান খালি করা হয়েছে। আর্থিক সংকট এর কারণে আপাতত সরঞ্জাম কেনা হচ্ছে না। প্রভোস্ট কার্যালয় থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্ল্যানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট বিভাগে বরাদ্দ চেয়ে আবেদন করা হয়েছে কিন্তু এর অগ্রগতি উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে স্থবির রয়েছে।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম হল প্রতিষ্ঠার সময় এর নকশায় জিমরুম স্থাপনের কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি।
নজরুল হলের জিমরুম চালু প্রসঙ্গে হলের ম্যানেজার মো. মাহবুব মিয়া জানান, হলের জীমরুম স্থাপনের প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য নাকচ করে দিয়েছিলেন বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে। একটি হলের জিমরুম স্থাপনের জন্য ছাত্ররা যেসব সরঞ্জাম চেয়েছেন সেগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট দেয়া ব্যতীত হলের ফান্ড থেকে কেনা সম্ভব নয়। এজন্য আপাতত নজরুল হলে জিমরুম স্থাপনের কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে। ১০৪ নং কক্ষ যেটি জিমরুম স্থাপনের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছিল সেটিতে পুনরায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আসন বণ্টন করা হবে। নতুন উপাচার্য আসলে এই নিয়ে পুনরায় আলোচনা হবে এবং তখন সিদ্ধান্ত আসলে আবার এটি নিয়ে কাজ শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আজিজ হলের জিমরুম সম্পর্কে জানতে চাইলে হলের প্রভোস্ট ড. মো: ইমদাদ সরকার বলেন, আপাতত আজিজ হলের দোতলায় যে রিক্রিয়েশন রুমটা আছে আমাদের টার্গেট ছিল ছাত্রদের সবাইকে রুমে শিফট করিয়ে দিয়ে ওই রুমটা আমরা টিভি রুম এবং এক্সারসাইজ রুম হিসেবে ব্যবহার করব। আমাদের প্ল্যান আছে এই রুমটাকে ফাঁকা করিয়ে সেখানে খেলাধুলা ও ব্যায়ামের কিছু জিনিসপত্র দিয়ে দেবো। ছাত্ররা সহযোগিতা করলে শীঘ্রই এর বাস্তবায়ন হবে।
তিনি আরো বলেন, আগে হলে জিম রুম থাকলেও অনেক আগে এটি বন্ধ হয়েছিল। কবে বন্ধ হয়েছিল এটার তথ্য আমার কাছে নেই। কালের পরিক্রমায় ছাত্ররা যখন গণরুমে থাকা শুরু করল তখন ছাত্রদের থাকাটাই প্রাধান্য হয়ে উঠল। এছাড়া আমাদের স্টাফদের থাকার কোনো জায়গা ছিল না। যার কারণে এটা বন্ধ করা হয়েছিল।
এই বিষয়ে বুটেক্স স্পোর্টস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মিহরাব পিয়াস বলেন, একজন শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যায়াম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমন নয় যে স্বাস্থ্য ধরে রাখার জন্য জিমনেশিয়ামেই ব্যায়াম করতে হবে কিন্তু একটি আবাসিক হলে জিমরুম থাকলে সেটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে শারীরিক ব্যায়াম চর্চায় আগ্রহী করে তুলবে। তাছাড়া বুটেক্সের কেন্দ্রীয় ফুটবল ও ক্রিকেট টিম যেসকল আন্তঃ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে সেখানে যাওয়ার আগে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য একটি জিমনেশিয়াম থাকা বাধ্যতামূলক, এর অভাবে দল গুলো বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যাওয়ার আগে প্রস্তুতির ঘাটতি থেকে যায়। এইসবের পাশাপাশি হলের ডাইনিং এ একজন পুস্টিবিদও প্রয়োজন যিনি শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের স্বাস্থ্যসম্মত খাওয়ার পূর্ণাঙ্গ তালিকা দিবেন কারণ খাদ্য ও শরীরচর্চা একে অপরের পরিপূরক।
উল্লেখ্য, প্রত্যেক হলের নিয়োজিত কর্মকর্তারা জিমরুম স্থাপনের জন্য প্রাথমিক উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন এবং আশা করা যাচ্ছে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই বুটেক্সের সকল হলের জিমনেশিয়াম স্থাপনের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।