বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে টেকসই উন্নয়ন এবং বৈশ্বিক চাহিদার সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুটেক্স) চালু করা হয়েছে নতুন স্নাতকোত্তর প্রোগ্রাম ‘সাস্টেইনেবিলিটি ইন টেক্সটাইলস’। এটি জার্মানির হফ ইউনিভার্সিটি অব অ্যাপ্লাইড সায়েন্সেস এবং বুটেক্সের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে।
বুটেক্সের এই নতুন এমএসসি প্রোগ্রামটি আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৫ সালের ২ জানুয়ারি শুরু হয়। জার্মান উন্নয়ন সহযোগিতা সংস্থা GIZ-এর ‘Higher Education and Leadership for Sustainable Textiles in Bangladesh’ (HELD) প্রকল্পের আওতায় এটি বাস্তবায়িত হয়েছে। এর মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের টেক্সটাইল শিল্পে সাস্টেইনেবিলিটি সংক্রান্ত উচ্চশিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা, যা এ পর্যন্ত দেশের অন্যান্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল না।
টেক্সটাইল কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অনুষদের ডীন অধ্যাপক ড. উম্মুল খায়ের ফাতেমা বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে সাসটেইনেবিলিটি এবং কমপ্লায়েন্স নিয়ে কাজ করার মতো দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ও গবেষক নেই। তাই এই বিষয়ে উচ্চতর শিক্ষা চালুর প্রয়োজনীয়তা দীর্ঘদিন ধরেই অনুভূত হচ্ছিল। এ প্রোগ্রাম সেই চাহিদা পূরণ করবে।
প্রোগ্রামটি দেড় বছর মেয়াদি এবং এতে তিনটি সেমিস্টার রয়েছে। এতে মোট আসন সংখ্যা ১৫টি। প্রোগ্রামটিতে যেকোনো টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাকগ্রাউন্ডের গ্র্যাজুয়েট আবেদন করতে পারবে। ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই সুযোগ পাবে এখানে পড়ার।
বুটেক্স ও হফ ইউনিভার্সিটি যৌথভাবে পাঠ্যক্রম তৈরি করেছে, যেখানে উভয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা পাঠদান করছেন। বুটেক্সের শিক্ষকরা অফলাইনে এবং এক বা একাধিক কোর্সে হফের শিক্ষকরা অনলাইনে পাঠদান করছেন।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা হফ ইউনিভার্সিটিতে স্টুডেন্ট এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের মাধ্যমে থিসিস করার সুযোগ পাবেন। Kik makes the difference- প্রোগ্রামের অধীনে দুইজন শিক্ষার্থী স্কলারশিপসহ এবং সাধারণ MOU-এর অধীনে পাঁচজন শিক্ষার্থী হফ ইউনিভার্সিটিতে থিসিস করতে যেতে পারবেন।
এই প্রোগ্রামের বর্তমান শিক্ষার্থীরা একে একটি যুগোপযোগী উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। শিক্ষকদের সহযোগিতার প্রশংসা করলেও কিছু চ্যালেঞ্জের কথাও উল্লেখ করেছেন তারা। অভিজ্ঞ সিনিয়র শিক্ষকের অপ্রতুলতার কথা জানায় তারা। কারিকুলাম বা রিডিং ম্যাটেরিয়ালস বেশিরভাগই বিদেশি-রিসোর্স নির্ভর, দেশীয় কন্টেন্টের অভাবের কথা জানায় শিক্ষার্থীরা।
এই প্রোগ্রামের গ্রাজুয়েটদের ক্যারিয়ার সম্ভাবনার প্রসঙ্গে অধ্যাপক ড. উম্মুল খায়ের ফাতেমা বলেন, সাস্টেইনেবিলিটি এখন কেবল নীতিগত বিষয় নয়, বরং এটি ব্যবসায়িক চাহিদায় পরিণত হয়েছে। টেক্সটাইল শিল্পে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন নিশ্চিত করা এখন বৈশ্বিক চাহিদা। এই মাস্টার্স প্রোগ্রামটি শিল্পের ভবিষ্যৎ চাহিদার জন্য দক্ষ কর্মী প্রস্তুত করবে এবং গ্রাজুয়েটরা দেশবিদেশের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা পাবে।
এই প্রোগ্রামের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম আকাশ বলেন, এই কোলাবোরেশন উচ্চশিক্ষা অর্জন এবং আমাদের দেশের টেক্সটাইল সেক্টরের বিকাশসাধনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে বলে আমি মনে করি। বুটেক্স কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান থাকবে যাতে তারা স্টুডেন্ট ফার্স্ট কথাটা মাথায় রেখে অযথা সেমিস্টার প্রলম্বিত না করা, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি গবেষণা ও সরাসরি কাজ-প্রশিক্ষণের সুযোগ সৃষ্টিসহ এই প্রোগ্রামের পরিকল্পনা-পরিধি সম্প্রসারণে কাজ করেন।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশে টেক্সটাইল শিল্পের ভবিষ্যৎ ও টেকসই উন্নয়নে এই মাস্টার্স প্রোগ্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।