মনে করেন এখন বৃষ্টি ভেজা রাত। ঘরের বাতিটি নিভিয়ে নরম বিছানায় সারা দিনের ক্লান্ত শরীরটি এলিয়ে দিলেন,হালকা তন্দ্রা ভাব আসতেই বৃষ্টির মাত্রাটা আরও একটু বৃদ্ধি পেতে শুরু হলো। বৃষ্টির রিমঝিম শব্দ শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছেন, তা ঠিক বুঝে উঠতে পারেন নি। তবে হঠাঠ’ই আপনি অনুভব করতে শুরু করলেন কেও যেন আপনাকে চেপে ধরে আছে, আপনার অস্থির লাগছে, ভয়ে আপনার দম বন্ধ লাগছে। বৃষ্টির ঠান্ডা আবহাওয়ার রাতেও আপনি ঘামতে শুরু করেছেন, যেন কোন ভাবেই মুক্তি মিলছে না এই অস্থিরতা থেকে।
না , ভয় পাবেন না। তেমন কিছুই হয় নি আপনার। একটু সস্তির নিশ্বাস ফেলা আবারও পড়া শুরু করুন। জেনে নিন বিস্তারিত।
এতোক্ষণ বলা ঘটনাগুলো যদি আপনার সাথে ঘটে তাহলে আপনাকে বোবায় ধরেছে। এখানের এই পুরো বিষয়টাকে মনোবিজ্ঞানের বলে বোবায় ধরা বা sleeping paralysis। এটি মানুষের সাথে ঘটে থাকা একটি সাধারন প্রক্রিয়ার অংশ । আসুন জেনে নেওয়া যাক এর মনোবৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা।
বোবায় ধরার ঘটনাকে অনেকেই বোবা জ্বীন বা ভুত ধরা বলে , মনোবিদরা এটাকে কুসংস্কার বলেই মনে করেন কারন এই ধারনার কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই । মনোবিদের মতে Sleep Paralysis কিংবা Hypnagogic Paralysis ব্যাপারটা একটু জটিল , আমাদের ঘুমের মধ্যে ২টা পর্যায় আছে ।
যথা:-
১. REM (Rapid Eye Movement)
২. Non REM (Non Rapid Eye Movement)
ঘুমের মধ্যে এ দুটি চক্র পর্যায়ক্রমে আমাদের মাঝে আসে। আমরা যদি কোনভাবে এই দুটি চক্রের মাঝের সময়ে জেগে যাই তখনই আমরা হাত-পা নাড়তে পারি না। কথা বলতে পারিনা। কারন আমাদের এই জেগে থাকা সম্পর্কে মস্তিষ্ক অবগত থাকেনা। এ ক্ষেত্রে কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। আর ঘুমে এই সময়কে অনেক সময় বলে মনে হতে পারে। আমরা জেগে আছি জানতে পারলে আমরা স্বাভাবিকভাবে হাত-পা নাড়াতে পারি এবং জেগে উঠি। এসময় কিছু দেখা বা গন্ধ পাওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়, কারণ মস্তিষ্ক তখন স্বপ্নের মতো দৃশ্য তৈরি করে। এই সুযোগে অনেকে ভুত-প্রেতও দেখে ফেলতে পারেন! কারন মস্তিষ্কে যখন অক্সিজেনের অভাব হয় তখন আমরা অস্বাভাবিক অনেক কিছু দেখতে পাই। জীবনের কোন এক সময় এমন অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েই থাকে মানুষ , তবে এমন ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটতে থাকলে তা এক প্রকার মানসিক সমস্যা।
কারন ও প্রতিকারের উপায়ঃ
১। অনিয়ম ঘুম সুতরাং প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ের ঘুমাতে যান।
২। রাত জাগা সুতরাং দ্রুত ঘুমিয়ে পরার অভ্যাস করুন।
৩। Stressful Life সুতরাং Stress মুক্ত থাকার চেষ্টা করুন
এজন্য Stress Management সম্পর্কিত Workshop করতে পারেন।
৪। ঘুমাতে যাবার পূর্বে দুশ্চিন্তা করা সুতরাং ঘুমানোর কমপক্ষে ১ ঘন্টা পূর্বে যে কোন ধরনের দুশ্চিন্তা থেকে নিজেকে দূরে রাখুন এজন্য Relaxation Skill বৃদ্ধির জন্য এই সম্পর্কিত Workshop গুলো করতে পারেন ।
৫। স্বাস্থ্যকর খাবার এবং ঘুমানোর পূর্বে পানি পান করুন।
৬। আরামদায়ক বিছানা প্রস্তুত করুন।