কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) পড়াশোনা করছেন প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষার্থী। এই বিশাল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের ঘিরে পাশ্ববর্তী এলাকার অনেক মানুষ যত্রতত্র ভিক্ষাবৃত্তি করছেন।
এতে বিড়ম্বনায় পড়ছেন শিক্ষার্থীরা৷ এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন জায়গায় কথা বলতে দেখা গেছে শিক্ষার্থীদের।
জানা গেছে, ক্যাম্পাস পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকার প্রায় অর্ধশতাধিক মানুষ নিয়মিত ভিক্ষাবৃত্তি করছে । এছাড়াও বিশেষ দিনগুলো ও জুমা’র সময় এই সংখ্যাটা আরো বেড়ে যায়। এ ভিক্ষুক তালিকার অনেকই রয়েছেন কর্মক্ষম। এছাড়া অনেক শিশুকেও নিয়মিত ভিক্ষা করতে দেখা যাচ্ছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের গ্রুপ ইবিয়ানে এক ফেসবুক পোস্ট দেন লোকপ্রশাসন বিভাগের স্নাতকোত্তর ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী।
পোস্টে তিনি লেখেন, দুপুরে অভি কফি শপে (বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আড্ডা স্থল ঝালচত্বরের একটি শপ) ৪০-৪৫ মিনিট বসে বন্ধুরা গল্প করছিলাম। এই অল্প সময়ের মধ্যে ১৭ জন ভিক্ষুক টাকা চাইতে আসলেন। কেউ কেউ ছোট অবুঝ বাচ্চাদের ব্যবহার করেই চালাচ্ছেন এই ভিক্ষা ব্যবসা। পাশে দেখলাম একটা আপু তার মা কে নিয়ে হাটছেন সেখানেও পিছে পিছে ভিক্ষার জন্য ছুটছেন তারা। না বলার পরেও তারা একপ্রকার হেনস্থাই করছেন কেউ কেউ।
পোস্টের শেষে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে ইঙ্গিত করে লিখেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আজগুবি নিয়ম তৈরি বাদ দিয়ে প্রথমে শিক্ষার্থীদের শান্তিতে বসার সুযোগ টুকু তৈরি করে দেন।
আর এ পোস্টের কমেন্টে মিনহাজ তানজিম হিমেল নামের একজন লিখেন, প্রচন্ড বিরক্তিকর অবস্থায় ফেলে দেয়, এক জায়গা থেকে একবার টাকা দিলে অথবা না বললে, পরের বার আরেক জায়গায় গিয়ে দেখা হলে আবার টাকা চায়।
মারিয়াম ইসলাম ডিনা নামের আরেকজন লিখেন, ঝালচত্ত্বরে গিয়ে দাঁড়ানো যায় না এদের কারণে।একবার টাকা দিলেও ঘুরে ফিরে আবার এসে চায়।
মানিক ত্রিপুরা নামের আরেকজন মন্তব্য করেন, আসলেই ভাই ইদানিং ক্যাম্পাসে ভিক্ষুকের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালমতো ভিক্ষা করলে হয়, কিন্তু ওরা একপ্রকার জোরজবরদস্তি করেই চায় যেটা খুবই বিরক্তিকর। তাও যদি প্রকৃতপক্ষে অচল বা অসুস্থ হতো তাহলে মানা যায়। কিন্তু ওরা বেশিরভাগ সুস্থ সবল। সেদিন একজন একদম ভালো মহিলাকে ভিক্ষা করতে দেখে মেসের কাজের বা হোটেলে কাজের অফার করেছিলাম। সে বলে কি টাকা দিলে দেন, না দিলে এতো কথা কইয়েন না। এরপর আর কি বলার আছে বলেন ভাই। তাই, ক্যাম্পাসে ভিক্ষুক প্রবেশ নিষেধ করা দরকার। মানবিক সহায়তা যারা যারা করতে চায়, তাদের জন্য ক্যাম্পাসে অনেক অসুস্থ ভাই বোনেরা রয়েছে তাদের করতে পারবে। তাও অন্ততপক্ষে ভিক্ষুক মুক্ত ক্যাম্পাস হোক।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে অতিরিক্ত ভিক্ষুক আসলেই বিড়ম্বনার। বিশেষ করে কিছু আছেন তারা ক্লাস বা পরীক্ষা চলছে সেখানে কোন রকম অনুমতি ছাড়াই প্রবেশ করছে যা খুবেই দুঃখজন। এসব বন্ধে প্রশাসনের সাথে পরামর্শ করে অতি শীঘ্রই কোন ব্যবস্থা নিব।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. শাহিনুজ্জামান বলেন, এ বিড়ম্বনার আমরা শিক্ষকরাও ভুক্তভোগী। একজন কে না বলা সত্বেও তাকে আবার বিরক্ত করা খুবেই দুঃখজনক। পরিকল্পনা আছে এদের ডেকে সচেতন করবো। যাতে কেউ একবার না বললে তাদের দ্বিতীয়বার যাতে বিরক্ত না করে। এছাড়া এরচেয়ে ভালো কি পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে আলোচনা করে ব্যবস্থা নিব।