রুশাইদ আহমেদ: ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশ।সহানুভূতির হাত বাড়ানোর অংশ হিসেবে জরুরি ত্রাণসামগ্রী, চিকিৎসা উপকরণ এবং মানবিক সহায়তা নিয়ে ইতোমধ্যে মিয়ানমারে পৌঁছেছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’। ভূমিকম্পের ফলে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত দেশটির জন্য এটি বাংলাদেশের আন্তরিক সহযোগিতার নিদর্শন।
শনিবার (১২ এপ্রিল) ইয়াঙ্গুন অঞ্চলে এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মনোয়ার হোসেন মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রীর নিকট প্রায় ১২০ টন ত্রাণ ও মানবিক সহায়তা সামগ্রী তুলে দেন। ত্রাণের মধ্যে রয়েছে খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানির সরঞ্জাম, ওষুধপত্র, জরুরি চিকিৎসা সরঞ্জাম এবং প্রাথমিক পুনর্বাসনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য সামগ্রী।
এই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত বাংলাদেশের ডিফেন্স অ্যাটাশে, কূটনৈতিক প্রতিনিধি, ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’-এর অধিনায়কসহ উভয় দেশের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা। মিয়ানমারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইয়াঙ্গুন কমান্ডের কমান্ডার, মিয়ানমার নেভাল ট্রেনিং কমান্ডের কমান্ডার এবং ১ নম্বর ফ্লিটের কমান্ডারসহ অন্যান্য সামরিক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ।
বাংলাদেশ সরকারের মানবিক উদ্যোগের অংশ হিসেবে তিনটি ধাপে মোট ১৫১ মেট্রিক টন ত্রাণ ও উদ্ধার সরঞ্জাম, চিকিৎসা দলসহ মিয়ানমারে পাঠানো হয়েছে। এই সহায়তা মিয়ানমারের বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারের দক্ষিণাঞ্চলীয় অঞ্চল এবং ইয়াঙ্গুন শহর মারাত্মক এক ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে। রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিল ৭.৭, যা বহু বছর পর এই অঞ্চলে অনুভূত হওয়া শক্তিশালী কম্পনগুলোর মধ্যে একটি।
ভূমিকম্পের কারণে শতাধিক ঘরবাড়ি ধসে পড়ে, সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে মিয়ানমারের বিপর্যস্ত অঞ্চলগুলোতে। দেশটির সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভূমিকম্পে অন্তত তিন হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন আরও কয়েক হাজার। ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে পড়াদের উদ্ধারে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এবং উদ্ধারকারী দল এখনও দিনরাত কাজ করে যাচ্ছে।
মিয়ানমারের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা চেয়েছে এবং বাংলাদেশ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় বন্ধুপ্রতিম প্রতিবেশী দেশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রয়োজনে ভবিষ্যতেও তারা মিয়ানমারের পাশে থাকবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সহায়তা অব্যাহত রাখবে।
বাংলাদেশ নৌবাহিনীর এই কার্যক্রম কেবল ত্রাণ বিতরণ নয়, বরং মানবতার প্রতি দায়িত্ববোধ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।