শুরু হয়েছে গুচ্ছ ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরিক্ষা । সারাদেশে একযোগে শুরু হওয়া এই পরিক্ষা সকাল ১১টা থেকে গড়াবে ১২টা অব্দি। এক ঘন্টার এই পরিক্ষায় জীবন সন্ধিক্ষণের চার বছরের হিসাব মেলানোর তাড়ায় ব্যস্ত যেন সমস্ত শিক্ষার্থী। তবে এই ব্যস্ততার অংশ থেকে বাদ যায়নি অভিভাবকরাও। ভেতরে পরিক্ষা থাকলেও বাইরে যেন এক ভিন্ন পরিবেশ। পরিক্ষার্থীর সঙ্গে আসা অভিভাবকদের চোখে মুখে দেখা গেছে উৎকন্ঠা ও চিন্তার পাহাড়। কেউ কেউ প্রাণভরে সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করছেন। আর কেউ কেউ এদিক সেদিক পায়চারি করে নিজেকে হালকা করছেন। বাবা, মা প্রিয়জনসহ সবাই যেন একরকম উদ্বেগ নিয়ে প্রহর গুনছেন হল থেকে বের হয়ে আসা ছেলেমেয়ের হাসিমাখা মুখ দর্শনের।
শুক্রবার (৩ মে) সকাল দশটায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ পরিদর্শনে এ দৃশ্য দেখা যায়।
মূল ফটক থেকে খানিকটা দূরে মামা হোটেলের সামনে দেখা মিলল আবিদ হোসেনের সাথে। মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ভর্তি পরিক্ষা দিতে বরুড়া থেকে। মেয়েকে ভেতরে দিয়ে একমনে মাথায় হাত দিয়ে বসে ভাবছেন মেয়ের অদূর ভবিষ্যতের কথা। তিনি প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, ‘মেয়েরটা পড়াশোনায় ভালো। তবে একটু ভয় পায়। তাই আমাকেই নিয়ে আসতে হয়েছে। জানিনা পরিক্ষায় কেমন লিখছে। তবে আমার অগাধ বিশ্বাস সে ভালো করবে।’
পাকিস্তানের মোড়ের দিকে হাতপাখা নিয়ে বসে আছেন সালিহা বেগম। এসেছেন লাঙ্গলকোট থেকে। আলাপ করছিলেন পাশে থাকা অন্যান্য অভিভাবকদের সাথে। কিছুটা দুশ্চিন্তায় আছেন। তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, ‘ওর বাবা বিদেশ থাকেন প্রায় ৫ বছর। তখন থেকেই আমি দেখভাল করছি। দোয়া করি আমার ছেলেটার ভালো কিছু হোক। ওর স্বপ্ন পূরণ হোক।’
মূল ফটকের সামনেই পাঞ্জাবি পরিধানরত আব্বাস উদ্দীন নিয়ে এসেছেন সামীকে। কর্মজীবনে দীর্ঘদিন তিনি আর্মিতে ছিলেন। তিনিও চেয়েছিলেন ছেলে আর্মি অফিসার হবে। তবে ছেলের ইচ্ছে আইন নিয়ে পড়াশোনা করবে। তাই ভর্তি পরিক্ষায় বসছে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটা কেন যে আমার কথা শুনেনি বুঝলাম না। দেখা যাক আল্লাহ কী করেন! ওর কপালে কী লিখা আছে! বাসা থেকে বের হওয়ার সময় বাপ ছেলে দু’জনেই দুই রাকাত নামাজ পড়ে বের হয়েছি।’
নির্দিষ্ট সময়ের পরই পরিক্ষার্থীদের আনাগোনা লক্ষ্য করা গেল। বোঝা গেল পরিক্ষা শেষ। দেখা গেল অভিভাবকরা ব্যতিব্যস্ত হয়ে জড়ো হচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে। বের হতেই কেউ কেউ সন্তানকে বুকে নিচ্ছেন। কেউ কেউ কপালে চুমু খাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ প্রশ্নপত্র খুলে পরখ করছেন। কেউ কেউ ত সন্তানকে পেয়েই হাসিমাখা মুখ নিয়ে তড়িঘড়ি শুরু করলেন বাড়ি ফেরায়। এবার তাহলে ফেরারই পালা।
এবার গুচ্ছ অধিভুক্ত ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘বি’ (মানবিক) ইউনিটের পরিক্ষায় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও পার্শ্ববর্তী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে ৪ হাজার ২৯২ জন পরিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা।
রকি উল হাসান
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়