ঈদ একটি শব্দের সাথেই জড়িয়ে আছে কত আবেগ-অনুভূতি আমাদের মনে ।সারাবছর যতই কর্মব্যস্ততা থাক না কেন নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা, সবাই মিলে ঈদগাহে যাওয়া,ছোটদের সালামী দেওয়া আর বিকালে পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হওয়া এগুলো আমাদের ঐতিহ্যের অংশ হয়ে গেছে। তেমনি ব্যতিক্রম নয় ছাত্র শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও। তাদের বর্তমান ঈদ উদযাপন নিয়ে আলাপচারীতা আর ছোটবেলার স্মৃতিচারণ তুলে ধরেছেন বিডিনিউজ ৭১ এর মাভাবিপ্রবি প্রতিনিধি আল সাদীদ খান শুভ —
‘সকল বাচ্চাদের আনন্দ উল্লাসে বাড়ীটা যেন হয়ে উঠে আত্মার বন্ধনের এক সুশীতল নীড়’
“আমাদের সকলের জীবনে স্মৃতিকাতর হয়ে চির অম্লান হয়ে আছে শৈশবের ঈদ। পরিবেশ, অবস্থা এবং বয়সের বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে এই স্মৃতির ভিন্নতা। শৈশবে রোজার ঈদে বাবা-মা ভাই-বোন সহ মার্কেটে যাওয়া, পছন্দমতো নতুন জামা-কাপড় কিনে ঈদের দিনে পরিধান করা- সে এক অন্যরকম অনুভূতি যা এখনো হৃদয়কে আলোড়িত করে। সময়ের পরিক্রমায় সকলে সাংসারিক জীবনের ব্যস্ততায় নিপোতিত হলেও, এখনো পরিবারের সকলে মিলে একসাথে ঈদ করার ব্যকুলতা কাজ করে।
ঈদের দিনে সকালে বাবার কবর জিয়ারত করে, ভাই ও ভাতিজা সকলে একই রকমের পাজামা-পাঞ্জাবি পরিধান করে ঈদের নামাজ আদায় করা; মা, ভাতিজিরা সহ পরিবারের গৃহীনিরা একই রকমের শাড়ী পরিধান করে সারাটাদিন রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, গল্প-গুজবে মেতে থাকা, সকল বাচ্চাদের আনন্দ উল্লাসে বাড়ীটা যেন হয়ে উঠে আত্মার বন্ধনের এক সুশীতল নীড়। এমন দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করি সারাটা বছর। এত আনন্দ-মুখর সময়টাতে মাঝে মাঝে হারানো বাবাকেও খুব মনে পড়ে। মনে পড়ে ছোট্ট বেলায় বাবার সাথে ঈদের আনন্দঘন মুহুর্তগুলোর কথা।”

‘এবারের ঈদটা আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল কারণ এটি কর্মজীবনের প্রথম ঈদ’
“ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এবারের ঈদটা আমার কাছে অনেক বেশি স্পেশাল। কারণ এটি কর্মজীবনের প্রথম ঈদ। এখন বড় হয়েছি, আল্লাহর রহমতে কর্মজীবনে প্রবেশ করেছি, তার সাথে ব্যস্ততাও বেড়ে গেছে। পরিচিত বন্ধুবান্ধবকেও এখন আর আগের মতো পাওয়া যায় না। তারাও তাদের নিজেদের কর্মজীবন, সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেছে, কিন্তু আগে কি সুন্দর সোনালী দিনগুলো ছিল। সেগুলো যদি ফিরে পাওয়া সম্ভব হতো। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা ঈদ মোবারক।”

‘ঈদের নতুন জামা কাউকে দেখাতাম না’
ফুড টেকনোলজি এন্ড নিউট্রিশনাল সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী বলেন, “ইসরাত জাহান আশা ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। ঈদ আসে ভুলিয়ে দিতে সকল বিবাদ-দ্বন্দ। আমাদের মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য এ দিনটি ব্যাপক মহিমান্বিত ও তাৎপর্যপূর্ণ। ছোটবেলায় যখন আমার বয়স প্রায় ৭/৮ বছর, চাঁদ রাতের দিন ইফতার কোন মতে সেরেই বন্ধু বান্ধবীরা মিলে ছাদে উঠে যেতাম আকাশে ঈদের চাঁদ দেখবো বলে। এরপর সবাই মিলে একসাথে লাইন ধরে বড় আপার ওখানে বসে থাকতাম হাতে সুন্দর করে মেহেদী আঁকাবার জন্যে! মেহেদী দেবার সময়ে মশা কামড়ে শেষ করত, তবুও নড়তাম না। আবার মেহেদী দেয়া শেষে আমরা পাল্লা দিতাম যে কার হাত বেশি রঙিন হবে! হাতে ৩/৪ ঘন্টা মেহেদী পড়ে থাকা হতো।সে জন্য বহু ব্যস্ততা থাকা সত্ত্বেও রাতে আম্মু নিজ হাতে খাইয়ে দিতেন। রাতে ঘুম আসতে চাইত না।ঈদের দিন সকাল সকাল উঠেই দৌড়ে গোসল সেরে নতুন জামা পড়ে, সাজগোজ করা শুরু করতাম! নতুন জামার নিয়ে একটা হাস্যকর বিষয় অনুসরণ করতাম, ঈদে শপিং করার পর নতুন জামা আগেই কাউকে কেউ দেখাতাম না, পুরাতন হয়ে যাবে এই ভেবে! এটা বলা চলে ঈদের দিনের একটা বিশেষ চমক ছিল। এরপর নামাজে যাবার আগে আব্বু সালামী দিয়ে যেতেন, তখন আম্মুও কিছু দিতেন। এরপর মিষ্টি, পায়েশ, পিঠা খেয়ে দৌড়ে বন্ধুদের বাড়িতে চলে যেতাম, তখন ওদের বাড়ির বড়রা সবাইকে চকচকে নতুন 2 টাকা, 5 টাকা কিংবা 10 টাকা করে সালামি দিয়ে সেমাই, পিঠা খেতে দিতেন। সালামি সংগ্রহ শেষে সবাই মিলে আবার হিসাব করতাম কে কত বেশি টাকা সালামি পেল। নতুন টাকাগুলি কেউই খরচ করতে চাইতাম না! তারপর বন্ধুরা মিলে কোথাও ঘুরে আসতাম। সন্ধ্যা পর্যন্ত অনেক মজা হতো। বিকেল হতেই মন খারাপ হয়ে যেত যে, ইশ! ঈদ টা চলে যাচ্ছে!

‘শৈশবে আবদার করার মানুষ ছিল’
“শৈশবের ঈদের তুলনা হয় না। তখন আবদার করার মানুষ ছিল। ঈদ বা কোনো অনুষ্ঠান বাবা মায়ের কাছে কিছু চাইতে পারতাম। শৈশবে অভাব অনটনের মধ্যে ভালো লাগা কাজ করতো। বর্তমানে স্বচ্ছলতার মধ্যে আগের মতো আবেগ কাজ করে না।”
