মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। মিয়ানমারের সামরিক প্রশাসনের প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন আং হ্লাইং জানিয়েছেন, মিয়ানমারে এখন পর্যন্ত ১৪৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, এবং আহত হয়েছেন ৭৩২ জন। তবে তিনি আশঙ্কা করছেন, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দেশটির নেপিডোতে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া, মান্দালে এবং অন্যান্য শহরেও হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে, তবে তুলনামূলকভাবে সংখ্যাটি কম।
বিপর্যয়ের মাত্রা বিবেচনা করে জেনারেল মিন আং হ্লাইং আন্তর্জাতিক সাহায্যের আবেদন করেছেন এবং জনগণকে মান্দালে ও নেপিডোর হাসপাতালগুলোতে রক্তদান করার অনুরোধ জানিয়েছেন।
মান্দালে শহরের এক বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন:
❝আমার শহরের অনেক ভবন ধসে পড়েছে। আমি আমার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারছি না দীর্ঘ সময় ধরে। কারণ সাগাইন শহরে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কবে এ সব কিছু ঠিক হবে কে জানে!❞
থাইল্যান্ডেও ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির নানা সূত্র। দেশটির রাজধানী ব্যাংককে একাধিক বহুতল ভবন ধসে পড়ার খবর পাওয়া গেছে এবং এখন পর্যন্ত ৭০ জন শ্রমিক নিখোঁজ রয়েছেন।
অপর দিকে, মিয়ানমারের কিছু অঞ্চলে ভূমিকম্পের পর বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদ মাধ্যম সিএনএন জানিয়েছে, মান্দালে, সাগাইন, নেপিডো, বাগো ও দক্ষিণ শান অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এসব অঞ্চলে বহু বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। সেখানে চাপা পড়ে থাকতে পারেন অনেক বাসিন্দা। পাশাপাশি, বহু এলাকা হয়ে পড়েছে বিদ্যুৎ ও টেলিযোগাযোগ সংযোগ বিচ্ছিন্ন।
মিয়ানমার রেড ক্রস সোসাইটি গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, তারা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করছে এবং একটি দল মান্দালে পাঠানো হয়েছে। ইন্টারনেট পর্যবেক্ষণ সংস্থা নেটব্লকস নিশ্চিত করেছে যে, ভূমিকম্পের পর মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে ইন্টারনেট সংযোগে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও লাওস একটি ভূমিকম্প-প্রবণ অঞ্চল, যেখানে অতীতে একাধিক ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প হয়েছে। ২০১৬ সালে মিয়ানমারের চাউক অঞ্চলে ৬.৮ মাত্রার ভূমিকম্পে বহু প্রাচীন স্থাপনা ধ্বংস হয় এবং প্রাণহানির ঘটনা ঘটে।
এ ছাড়া, ২০১১ সালে ৬.৯ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্পে থাইল্যান্ড, লাওস ও ভিয়েতনামেও কম্পন অনুভূত হয়েছিল।
ভূমিকম্প-পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরি সেবার কার্যক্রম দ্রুত সক্রিয় করাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভবন নির্মাণে ভূমিকম্প-প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলায় পরিকল্পিত প্রস্তুতি গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে প্রাণহানি কমানো সম্ভব হবে।