রুশাইদ আহমেদ: পেশাগত জীবনে প্রায় এক দশক ধরে নানা ক্লাব আর পর্তুগাল জাতীয় দলের মধ্যমাঠে সকলের মধ্যমণি হয়ে উঠেছিলেন দিয়োগো জোতা নামের এক যুবক। এই সময়ের মধ্যেই তাঁর ঝুলিতে জমেছিল জাতীয় দলের হয়ে দুটি উপমহাদেশীয় শিরোপা। চলতি বছরেই ক্লাব ক্যারিয়ারেও এসেছিল একটি প্রিমিয়ার লিগ শিরোপা।
কিন্তু এর চেয়ে বেশি কিছু জয় করা আর কপালে ছিল না এই ২৮ বছর বয়সী ক্ষণজন্মার। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) স্পেনের জামুরা এলাকায় এক সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহোদরসহ চিরতরে মুদে গেল তাঁর চোখ। ফলে আর কখনও লিভারপুল কিংবা পর্তুগালের হয়ে মাঝমাঠে দ্যুতি ছড়ানোর হবে না এই পর্তুগিজ তারকার।

এ দিকে, গত ২২ জুন দীর্ঘদিনের প্রণয়কে পরিণয়ে রূপ দিয়ে বান্ধবী রুট কর্ডোসার সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন জোতা৷ দুই পুত্র ও এক কন্যা সন্তানও আছে জোতা-রুট জুটির। তবে সদ্য শুরু হওয়া এক স্বপ্নিল পারিবারিক যাত্রা দুই সপ্তাহ না পেরোতেই রূপ নিলো এক দুঃস্বপ্নময় বিষাদে। যা কখনোই ভুলবে না জোতার পরিবার।
আটলান্টিক মহাসাগরের উপকূলঘেষা পর্তুগিজ শহর পোর্তোতে জন্ম নেওয়া দিয়োগো জোতা ফুটবলকে ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন ২০১৪ সালে। ওই বছর পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-১৯ ও প্রিমেইরা লিগের ক্লাব পাসোস দ্য ফেরেইরাতে অভিষেক ঘটে তাঁর। খেলেন পর্তুগাল অনূর্ধ্ব-২১ ও ২৩ দলেও।

পরে স্পেনের জনপ্রিয় ফুটবল ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদের সঙ্গে ২০১৬ সালে চুক্তিবদ্ধ হন জোতা। কিন্তু তাঁকে ধারে খেলতে পাঠানো হয় নিজ শহরের ক্লাব এফসি পোর্তোতে। সেখানে ২৭ ম্যাচ খেলে ৮ গোল করেন তিনি।
পরের মৌসুমে জোতাকে ধারে ইংল্যান্ডের ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনে খেলতে পাঠায় আতলেতিকো। সেখানে প্রথম মৌসুমে ৪৪ ম্যাচে ১৭ গোল করে অনবদ্য পারফরম্যান্স উপহার দেওয়ায় উলভারহ্যাম্পটন কর্তৃপক্ষ কিনে নেয় তাঁকে। এবার ৬৭ ম্যাচে ১৬ গোল এবং বেশ কিছু অ্যাসিস্ট করেন জোতা।

উলভারহ্যাম্পটনের হয়ে দুর্দান্ত খেলতে থাকায় প্রিমিয়ার লিগের শীর্ষ দলগুলো নজর দেয় জোতার দিকে। পরে ২০২০ সালে জোতাকে নিজেদের দলে ভেড়ায় অলরেডস বলে খ্যাত লিভারপুল ফুটবল ক্লাব।
ক্যারিয়ারের সোনালী সময়ে প্রবেশ করেন জোতা। অলরেডসদের হয়ে শতাধিক ম্যাচ খেলে জেতেন এফএ কাপ, লিগ কাপ এবং সবশেষে প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা।

একইসঙ্গে, বিশ্বখ্যাত ফুটবল তারকা রোনালদো-ফেলিক্সদের সতীর্থ হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেন জোতা। ২০২১ সালে ইউরোতে ঘরের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারেনায় জার্মানির বিপক্ষে এক চোখধাঁধানো গোল করেন তিনি। সে যাত্রায় পর্তুগাল বাড়ি ফিরে গেলেও তাঁর সেই গোলের দৃশ্য এখনও অনেকের মনে দাগ কেটে আছে৷
সবমিলিয়ে ২৮ বছরের ক্ষুদ্র এক জীবনে পর্তুগালের হয়ে ৪৯ ম্যাচ খেলে ২০২১ ও ২০২৫ সালের উয়েফা নেশন্স লিগ জয়ের স্বাদ পান জোতা। এর সঙ্গে ক্লাব ক্যারিয়ারের সাফল্যও তাঁকে একজন ক্ষণজন্মা মধ্যমাঠের মধ্যমণি হিসেবে ফুটবল ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে দেয় অন্যদের থেকে একটু আলাদাভাবে।