রুশাইদ আহমেদ: বহু বছর ধরে ক্রমবর্ধমান হারে নাব্যতা হারাচ্ছে খুলনার একাধিক নদ-নদী। পাশাপাশি অবৈধ ভোগ-দখল ও ভরাট করার কারণে সংকুচিত হয়ে মৃত্যু পথযাত্রী হয়েছে এ অঞ্চলের ১০-১২টি নদ-নদী।
এক সময়ের খরস্রোতা শোলমারী নদী এখন সংকুচিত হয়ে মাত্র ১৫-২০ ফুট প্রশস্ততায় রূপ নিয়েছে। ভাটার সময় নদীর তলদেশ শুকিয়ে যায়, জোয়ার এলেও অনেকে পার হতে পারেন হেঁটেই। একই চিত্র খুলনার আরও ১০টিরও বেশি নদ-নদীর, যা বর্তমানে এ অঞ্চলে ভয়াবহ অবস্থার চিত্রকে ফুটিয়ে তুলেছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যানুযায়ী, খুলনায় মোট ৫৮টি নদী রয়েছে, যার মধ্যে ১২টি নদী প্রায় মৃতপ্রায়। ডুমুরিয়ার হামকুড়া নদী সম্পূর্ণ ভরাট হয়ে এখন চাষাবাদের জমিতে পরিণত হয়েছে। ভদ্রা ও আপার সালতা নদী ২০১৫ সালে ভরাট হয়ে গেলে ২০১৯ সালে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা ব্যয়ে খনন করা হয়। তবে নদীর বাঁধ অপসারণ না করায় দুই বছরের মধ্যেই আবার ভরাট হয়ে গেছে। দখলদারদের দৌরাত্ম্যে নদীর জায়গা সংকুচিত হচ্ছে, কেউ কৃষিকাজ করছে, কেউ ঘরবাড়ি গড়ে তুলছে। ফলে সার্বিকভাবে কোনো পদক্ষেপ কাজে আসছে না।
তেরখাদার চিত্রা ও পাইকগাছার শিবসা নদীর অবস্থাও দিন দিন খারাপ হচ্ছে। রূপসার আঠারোবাকি, কয়রার কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে। বর্ষার সময় এ নদীগুলো দিয়ে আশপাশের এলাকার পানি ঠিকমতো নিষ্কাশিত হয় না, ফলে দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
পাইকগাছার শিবসা নদী, কয়রার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া ও কয়রা নদী পলিতে ভরাট হওয়ায় অমাবস্যা-পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের সময়ও জোয়ারের পানি আশপাশের জনবসতিতে ঢুকে পড়ে। খুলনা মহানগরের ময়ূর নদীও তীব্র দূষণের শিকার, যেখানে প্রতিদিন শিল্পবর্জ্য ও আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। এতে করে পানি কালো বর্ণ ধারণ করে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মো. বাবুল হাওলাদার জানিয়েছেন, নদীগুলো খননের পরও সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা আবার ভরাট হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ দখলকারীরা মাঝে মাঝে প্রশাসনের সহায়তায় নিজেদের প্রভাব বজায় রাখছেন। ফলে ভরাট না হওয়া নদীগুলো, যেগুলোর পানি প্রায় শুকিয়ে গেছে, সেগুলোর অবস্থাও প্রতিনিয়ত অবনতির দিকে এগোচ্ছে। নদীগুলো সম্পূর্ণ মরে গেলে কৃষি জমিতে স্থায়ী জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি খুলনা মহানগরীতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হতে পারে বর্ষা মৌসুমে।
পাউবোর খুলনা অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা জানিয়েছেন, শোলমারী ও আপার সালতা নদী পুনঃখননের জন্য একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নদীগুলোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি স্টাডি প্রকল্প অনুমোদিত হয়েছে। মাঠ পর্যায়ের জরিপের পর সুপারিশ অনুযায়ী অন্যান্য নদীগুলোর খনন কার্যক্রম পরিচালিত হবে।