রাজন হোসেন তৌফিকুল মৌলভীবাজার:
মৌলভীবাজার জেলার সাত উপজেলায় ৯৩টি চা বাগানে প্রায় নব্বই হাজার শ্রমিক কাজ করেন। চা বাগান প্রতিষ্ঠার প্রায় পৌনে দুইশ বছর তো বটেই দেশ স্বাধীন হওয়ার দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এসব চা শ্রমিকদের ঘরে সচ্ছলতা ফেরেনি, হয়নি জীবনমানের তেমন উন্নতি।
প্রতিবছর মে দিবস ঘিরে শ্রম অধিকার নিয়ে নানা আয়োজন হলেও মৌলভীবাজার জেলার চা শ্রমিকদের ভাগ্যের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ বুনাজী বিডিএন কে বলেন, ১৮৫৪ সালে বাংলাদেশে চা বাগানের যাত্রা শুরু হয়। তার আগে থেকেই ব্রিটিশরা ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে কাজের কথা বলে বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠির মানুষকে এই এলাকায় বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসে। এখানে এনে এক প্রকার বন্দি করেই তাদের দিয়ে কাজ করানো হত।
তার ভাষ্য, “আজকের যে সুন্দর চা বাগান দেখছেন, আগে এই জায়গাটা কেমন ছিল, তা কল্পনা করাও কঠিন। ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছিল পুরো এলাকা। বিভিন্ন জীবজন্তুতে ভরপুর ছিল। চিতা বাঘ, বন্যহাতি, ভালুক, বন্য শুকরসহ বিভিন্ন প্রজাতির হিংস্র প্রাণী ছিল এই বনে। ছিল বিষাক্ত সাপ। এসবের সঙ্গে মোকাবেলা করে জঙ্গল কেটে এখানে বাগান সৃজন করা শ্রমিকদের জন্য ছিল বাধ্যতামূলক।”
তিনি বলেন, এরপর থেকে এসব জাতি-গোষ্ঠির নামের পাশে সংযুক্ত হয় এক নতুন পরিচয় ‘চা শ্রমিক’।
শ্রীমঙ্গল হরিণ ছড়া বাগানের ফাঁড়ি বাগান মেকানীছড়ার বাসিন্দা প্রবীণ ব্যক্তি, অবসরপ্রাপ্ত চা শ্রমিক রাম সিং গোঁড় বলেন, তার বাবার আদি ভূমি ছিল ভারতের মধ্য প্রদেশের জবলপুর। চা চাষের জন্য তার বাবা এবং দাদা এই এলাকায় প্রথম আসেন।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন, বালিশিরা ভ্যালি সভাপতি বিজয় হাজরা বলেন, তাদের বর্তমান মজুরি দৈনিক মাত্র ১৭৮ টাকা। তা বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করার দাবি বহু দিনের। তবে এবারের মে দিবসে ভূমি অধিকারের পাশাপাশি তাদের দাবি, চা বাগান এলাকায় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং বাগানে শিক্ষিত ছেলে-মেয়েদের চাকরির ব্যবস্থা করা।