রাজন হোসেন তৌফিকুল, মৌলভীবাজার
মৌলভীবাজার সদর মডেল থানার শেরপুর ঈদগাহ রোড আবাসিক এলাকায় এমদাদ মোহাম্মদ সিরাজের বাড়ীতে কতিপয় দুস্কৃতিকারী গত ৩ ফেব্রুয়ারি আড়াইটায় বসতঘরের গেইটের তালা কেটে বসত ঘরের দরজার সিটকারী ভেঙ্গে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করে বসতঘরে থাকা লোকদের ভয়ভীতি দেখাইয়া সর্বমোট ২৩ ভরি স্বর্ণালংকার মূল্য অনুমান ২৩ লক্ষ টাকা এবং নগদ ৬ লক্ষ ৯ হাজার টাকা লুন্ঠন করে নিয়ে গেলে থানায় মামলা দায়ের হয়।
দীর্ঘদিন বিভিন্ন তদন্তের পর ঘটনার সাথে জড়িদের গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় তাদের নিকট হইতে লুন্ঠিত মালামাল, নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকার, মুখোশ, মোটর সাইকেল ও প্রাইভেট কার উদ্ধার করা হয়। আজ মঙ্গলবার দুপুরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনের মাধ্যমে এতথ্য নিশ্চিত করা হয়।
পুলিশ সুপার জানান, ঘটনার পরপরই মামলা রুজু হলে পুলিশ সুপার এম, কে, এইচ, জাহাঙ্গীর হোসেন (পিপিএম-সেবা) এর নির্দেশনায় মৌলভীবাজার সদর মডেল থানা পুলিশের একটি বিশেষ টিম, পাশবর্তী সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানা এলাকা এবং সিলেট জেলার ওসমানীনগর এবং এসএমপি সিলেট এর দক্ষিন সুরমা থানা এলাকায় তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মো: রায়হান মিয়া (২৫), পিতা-ময়না মিয়া, সাং-কামরাখাইর, থানা-জগন্নাথপুর, জেলা-সুনামগঞ্জকে গ্রেতার করা হয় এবং তার দেওয়া তথ্য মতে আসামী আক্কুল মিয়া ওরফে আকুল (৩৪), পিতা-মৃত ইদ্রিস মিয়া, সাং-নওধার পূর্বপাড়া, থানা-বিশ্বনাথ, জেলা-সিলেট, আসামী মো: আফাজ মিয়া (৪৯), পিতা-সঞ্জব উল্লাহ, সাং-পারকুল, থানা-নবীগঞ্জ, জেলা-হবিগঞ্জদেরকে গ্রেফতার করা হয় এবং তাদের দেওয়া তথ্যমতে আসামী রায়হান মিয়ার বসতঘর হতে ৬ রাউন্ড কার্তুজ উদ্ধার করে জগন্নাথপুর থানায় অস্ত্র আইনে মামলা দায়ের করা হয়।
মামলায় বিজ্ঞ আদালতের আদেশমতে আসামীকে দুই দিনের পুলিশ রিমান্ডে আনিয়া গতকাল ২৮ এপ্রিল সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানা এলাকায় অভিযান করিয়া তাদের সহযোগী আসামী মো: মনর মিয়া (৫৫) পিতা মৃত সুজাত মিয়া, সাং কামড়াখাইর, থানা- জগন্নাথপুর, জেলা- সুনামগঞ্জ এর বসতবাড়ীতে অভিযান করে আসামীদের দেখানো মতে আসামী মনর মিয়ার বসতঘরের গ্যারেজ হতে দুইটি দেশীয় তৈরি পাইপগান, হাইড্রোলিক কাটার, তালা কাটার সাবল, মুখোশ উদ্ধার পূর্বক জব্দ করা হয় এবং উক্ত অস্ত্র উদ্ধার সংক্রান্তে জগন্নাথপুর থানায় অস্ত্র আইন মামলা দায়ের করা হয়।
পরে আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে তাদের দেওয়া তথ্যমতে সিলেট কোতোয়ালী থানাধীন সোবহানীঘাট এলাকা থেকে ঘটনায় জড়িত আসামী অশোক কুমার দে (৪০) কে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যমতে আন্ত:জেলা ডাকাত দলের প্রধান আসামী তোফায়েল আহমদ তোফা (৩৬) পিতা মৃত নূর মিয়া, সাং মোবারকপুর, থানা- ওসমানীনগর , জেলা- সিলেটকে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে স্বর্ণালংকার ক্রেতা সিলেট শহরস্থ লালদিঘীরপাড় কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ মার্কেট এর স্বপন কর্মকারের জুয়েলার্সে অভিযান করে লুন্ঠিত স্বর্ণের ক্রেতা আসামী দিনেশ কর্মকার (৬৫) কে গ্রেফতার হয় এবং তাহার হেফাজত হতে বাদীর লুন্ঠিত ৪ ভরি ৭ আনা স্বর্ণালংকার এবং স্বর্ণবিক্রির নগদ ৮ লাখ ৬ হাজার ৯৮২ টাকা উদ্ধার করা হয়।
আসামীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, উল্লেখিত ডাকাতির ঘটনা ছাড়াও তারা পরস্পর যোগসাজসে গত ২১ এপ্রিল রাত অনুমান ২টা ৫০ মিনিটে মৌলভীবাজার সদর মডেল থানাধীন ১নং খলিলপুর
ইউপির বাগারাই গ্রামে প্রবাসী আব্দুর রহিম এর বসতঘরের কেচি গেইটের তালা কেটে বসতঘরে প্রবেশ করে পরিবারের সবাইকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে স্বর্নালংকার এবং নগদ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ টাকা লুঠ করার ঘটনায় জড়িত মর্মে স্বীকার করে। এই সংক্রান্তে পূর্বেই মৌলভীবাজার থানায় ডাকাতি মামলা রুজু হয়। উদ্ধারকৃত মালামাল দুইট পাইপগান, ৬ রাউন্ড কার্তুজ ১ টি হাইড্রোলিক কাটার ১ টি তালা ভাঙার শাবল, ডাকাতির সময় ব্যবহৃত মুখোশ, স্বণাংলংকার ৪ ভরি ৭ আনা, নগদ টাকা ৮ লাখ ৬ হাজার ৯৮২ টাকা, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি প্রাইভেট কার ও একটি মোটরসাইকেল।
(২৯ এপ্রিল ) মঙ্গলবার মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে তথ্য জানানো হয় ,
সংবাদ সন্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(ক্রাইম এন্ড অপস) নোবেল চাকমা, সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আজমল হোসেন ও সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক(তদন্ত) মিনহাজ উদ্দিন প্রমূখ।